কান্না থামছে না সাজ্জাদের মায়ের

স্বজনরা বিয়ের কথা বললে সাজ্জাদ হোসেন (২৪) বলেছিলেন, এবার কাতার থেকে বাড়ি ফিরে একটু গুছিয়ে নিয়েই বিয়ে করবেন। কিন্তু বিয়ে করে তার আর ঘর-সংসার করা হলো না। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে কে বা কারা তাকে গলাকেটে হত্যা করেছে।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের কালাপানি (সেমুতাং গ্যাসফিল্ড) এলাকার মাসুদ রানা ও শিউলী আক্তার দম্পতির ছেলে। বেশ কয়েক বছর কাতারে ছিলেন তিনি। এক মাস ১১ দিন আগে বাড়ি ফেরেন। এর মধ্যে ছেলের এমন মৃত্যুতে মা শিউলী আক্তারের কান্না যেন থামছেই না। কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।

রবিবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিউলী আক্তার কাঁদছেন। স্বজনরা পাশে বসে আছেন। কারও সান্ত্বনা যেন তার মন মানছে না।

আরও পড়ুন: নিজ ঘরে পড়ে ছিল প্রবাসী যুবকের লাশ

আহাজারি করে কাঁদতে কাঁদতে শিউলী আক্তার বলেন, ‘ও আমার বাবা, এত কষ্ট করে জায়গা কিনে ঘর করেছিস, এখন কে থাকবে এই ঘরে?’

সাজ্জাদের মামা শরিফুল ইসলাম জানান, সাজ্জাদদের বাড়ি মূলত ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা থানার হাজিপুর গ্রামে। তবে নানার বাড়ির খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের কালাপানি (সেমুতাং গ্যাসফিল্ড) এলাকায় থাকেন তারা। শরিফুলের বোন-বোনের জামাইসহ সবাই যোগ্যাছোলাতেই থাকতেন। তার দুই ভাগিনা ও এক ভাগনি। ভাগনি তানজিনা শ্বশুরবাড়িতে আছেন। সবার বড় ভাগিনা সাজ্জাদ কাতার প্রবাসী এবং ছোট ভাগিনা মোস্তাফিজ এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। 

সাজ্জাদ পড়ালেখা করে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে কাতারে যান। সেখানে একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। প্রথম যাওয়ার দুই বছর পরে বাড়িতে ছুটিতে আসেন। দুই মাসের মতো থেকে আবার চলে যান। তিন বছর পর তিন মাসের ছুটিতে গত ১ মাস ১১ দিন আগে বাড়িতে আসেন। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মানিকছড়ি উপজেলার সেমুতাং গ্যাসফিল্ড এলাকায় প্রায় ৪০ শতকের মতো জায়গা কেনেন। ১০ শতকের মাঝে বাউন্ডারি ওয়ালসহ টিনশেড বাড়ি করেছেন। এবার বিদেশ থেকে আসার পর ঘরের যাবতীয় কাজ শেষে করেন।

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাজ্জাদকে বিয়ে করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু আরেকবার বিদেশ করে এসে ঘর-সংসার করার কথা বলেছিল সে। বিয়ে বা ঘর-সংসার কোনোটাই তার হলো না।’

আরও পড়ুন: ঘরে ঢুকে প্রবাসীকে গলা কেটে হত্যা, ভাইসহ আটক ৩

সাজ্জাদের বাবা মাসুদ রানা জানান, রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ লাশ হস্তান্তর করার পর দাফন করা হয়েছে। কারও সঙ্গে সাজ্জাদের বিরোধ ছিল না। ইসলাম ও শরীয়াহ মতে চলতেন। কখনও কোনও ছবিও তোলেননি। ঘরে একটি ছবিও নেই। কারা কেন তাকে হত্যা করলো, কিছুই বুঝতেই পারছেন না মাসুদ রানা।

পুলিশ জানায়, গভীর রাতে ঘরে ঢুকে সাজ্জাদ হোসেনকে কে বা কারা গলাকেটে সাজ্জাদকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। লাশ উদ্ধার করে জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় তার ভাইসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।

মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহনূর আলম জানান, এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে কোনও মামলা হয়ণি। তবে সাজ্জাদের ছোট ভাই মোস্তাফিজ, খালাতো ভাই আবু বকর ও প্রতিবেশী অটোরিকশাচালক ফারুক হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।