শিশুদের জন্য উন্মুক্ত, বাকিদের লাগবে টিকিট

করোনা মহামারির কারণে তিন বছর স্থগিত থাকার পর ফের শুরু হচ্ছে বিশ্ব-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আসর ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’। এবারের আসরে নতুন সংযোজন টিকিট। প্রতি বছর এই উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও এবার সেটি শুধু বহাল থাকছে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য।

রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবার ১২ বছরের বেশি বয়সের দর্শনার্থীদের উৎসবে প্রবেশ করতে লাগবে টিকিট। ফেস্টের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ দর্শকদের জন্য টিকিট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক জনপ্রতি ৫০০ টাকা। তবে একসঙ্গে চারদিনের টিকিট নিতে চাইলে ছাড় মিলবে ৫০০ টাকা, পাওয়া যাবে ১৫শ টাকায়। এদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুখবর। তারা প্রতিজন রোজকার জন্য ২০০ টাকায় টিকিট কিনতে পারবেন এবং একসঙ্গে চারদিনের কিনলে সেটি পাবেন মাত্র ৫০০ টাকায়।

এছাড়া ভিআইপি ক্যাটাগরির জন্য প্রতিদিন একজন দর্শনার্থীর টিকিট মূল্য পড়বে ৩ হাজার টাকা করে। একসঙ্গে চারদিনের জন্য কিনলে পাওয়া যাবে ১০ হাজার টাকায়। এই ক্যাটাগরির আওতায় দর্শকরা পাবেন ফ্রি পার্কিং সুবিধা, ভিআইপি আইডি কার্ডসহ ঢাকা লিট ফেস্টের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রবেশের সুযোগ, যেখানে থাকছে লাঞ্চের ব্যবস্থাও।

দশম আসরে এসে কেন টিকিট ব্যবস্থা চালু করা হলো—এ প্রসঙ্গে ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিশ্বের সকল আন্তর্জাতিক উৎসবে টিকিট কেটেই যেতে হয়। আমরা বাংলাদেশে নবম আসর পর্যন্ত বিনামূল্যে রেখেছিলাম। দশম আসরে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি টিকিট ব্যবস্থায় যাওয়ার। আর তাছাড়া সংগীত উৎসব কিংবা বিদেশি তারকাদের নিয়ে যে কোনও অনুষ্ঠানে আমরা তো টিকিট কেটেই যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে সাহিত্যের জন্য কেন হবে না? এখানে নোবেল ও বুকারজয়ী লেখকসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেক লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশকসহ অনেকেই আসবেন। যেমন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্টও আসবেন। তাদের অনেকের একজনের বিমান ভাড়াই তো ৫ লাখ টাকা। বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় করপোরেট নির্ভরতা কমাতে ও ঢাকা লিট ফেস্টকে আরও টেকসই করতেই আমরা পাঠকদের কাছে এই সহায়তা চাইছি। 

এই প্রসঙ্গে ঢাকা লিট ফেস্টের আরেকজন পরিচালক আহসান আকবার বলেন, লন্ডনে এই লেখকদের একটা সেশন দেখতেই আপনাকে ৫০ পাউন্ড দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। বিদেশে অনেক উৎসবের মূল টিকিট কেনার পরও আলাদা করে সেশনের টিকিট কিনতে হয়। সেখানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান লেখকদের সব সেশন এক টিকিটেই দেখা যাবে বাংলাদেশের এই আয়োজনে। সেই বিচারে আমাদের টিকিটমূল্য অনেক সাশ্রয়ী বলে মনে করি।

উৎসবে অংশ নিতে চাওয়া আগ্রহীদের অগ্রিম বা অনস্পট টিকিট সংগ্রহের বিষয়ে বেশ সচেতন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে উৎসবের আরেক পরিচালক সাদাফ সায্ জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাবে। এবং সেখানে টিকিট করার জন্য সব ধরনের পদ্ধতিই থাকবে। এছাড়া লিট ফেস্টের দিনগুলোতে প্রবেশপথেও টিকিটের ব্যবস্থা থাকছে।

তিনি আরও জানান, দশ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু একবার ভেন্যুতে ঢুকে গেলে সেখানে যত ইভেন্ট হবে সবগুলোতে সবার সমান প্রবেশাধিকার। সেখানে কোনও বিভাজন নেই। চারদিনে প্রায় ১৭৫টি সেশনে ৫২৫ জন বক্তা ও ১০০ কালচারাল পারফর্মার উপস্থিত হবেন। প্যানেল আলোচনা, ওয়ান-টু-ওয়ান আলোচনা, মিউজিক পারফরমেন্স, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা ধরনের আয়োজনে সিট অনুযায়ী আগে আসলে আগে ভিত্তিতে প্রবেশাধিকার পাওয়া যাবে।

এবারের আসর বসছে যথারীতি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, নতুন বছরের (২০২৩) প্রথম সপ্তাহ থেকে। ৫ জানুয়ারি শুরু হয়ে উৎসব শেষ হবে ৮ তারিখে। চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক সাদাফ সায্, আহসান আকবার ও কাজী আনিস আহমেদ যৌথভাবে এ তথ্য জানান।

এবারের অন্যতম আকর্ষণ হলো ২০০৬ সালে নোবেলজয়ী লেখক ওরহান পামুক এবং ২০২১ সালের নোবেল জয়ী লেখক আবদুলরাজক গুরনাহ। এছাড়াও ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক বুকারজয়ী লেখক গীতাঞ্জলী শ্রী ছাড়াও খ্যাতিসম্পন্ন পুরস্কারজয়ী বক্তারা সরাসরি অংশ নেবেন। যাদের মধ্যে পুলিৎজার, ইন্টারন্যাশনাল বুকার, নিউস্ট্যাড ইন্টারন্যাশনাল, পেন বা পিন্টার, প্রিক্স মেডিসিস, অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, উইন্ডহাম ক্যাম্পবেল পুরস্কার, অ্যালার্ট মেডেল, ওয়াটারস্টোন চিল্ড্রেনস বুক প্রাইজ, আগা খান অ্যাওয়ার্ডসহ অন্যান্য পুরস্কারজয়ীরাও থাকছেন।

এছাড়াও বিভিন্ন সেশনে থাকছেন দেশের একঝাঁক স্বনামধন্য শিল্পী-সাহিত্যিক। থাকছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণজুড়ে দেশ-বিদেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ছোঁয়ায় বর্ণীল নানা আয়োজন।