স্যার ফজলে হাসান আবেদের অনুদানে হচ্ছে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট ট্রাস্ট’

ঢাকা লিট ফেস্টের দশম বর্ষের প্রথম দিনের আয়োজন শেষ হয়েছে উপচেপড়া দর্শনার্থীদের ভিড়ে। সন্ধ্যার দিকে বাংলা একাডেমির সরদার আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মৃতিচারণামূলক আলোচনা অনুষ্ঠান ‘ইন মেমোরিয়াম: ফজলে হাসান আবেদ’ অনুষ্ঠিত হয়। 

ঢাকা লিট ফেস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাদাফ সাযের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা আবেদ ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ। 

আলোচনায় স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনের নানা গল্প উঠে আসে তাদের স্মৃতিচারণায়। লন্ডনে লোভনীয় করপোরেট ব্যাংকিংয়ের চাকরি ছেড়ে ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফেরা, শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠা এবং তার অদম্য পরিশ্রম কীভাবে ব্র্যাককে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত করেছে সেই গল্পও আলোচকদের মুখে ফিরে আসে বারবার। 

আলোচনা অনুষ্ঠানে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তামারা আবেদ ও শামেরান আবেদ। স্যার আবেদের প্রিয় কবিতাও আবৃতি করে শোনান তামারা আবেদ। দুই ভাইবোনের কেউই কখনও ব্র্যাকে যোগ দেওয়ার কথা ভাবেনি, কিন্তু ভাগ্যেই যেন তাদের বেছে নিয়েছিল ব্র্যাকের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। 

তারা আরও জানান, মৃত্যুর আগে ঢাকা লিট ফেস্টের জন্য অনুদান দিয়ে যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ। সেই টাকায় তার সন্তানেরা ঢাকা লিট ফেস্ট ট্রাস্ট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা বলেন, ট্রাস্ট গঠন হবে, যেন লিট ফেস্ট আয়োজনের ধারা অব্যাহত থাকে। 

আলোচনায় স্যার ফজলে হাসান আবেদের রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর অনুরাগের কথাও উঠে আসে আলোচনায়। বইমেলা, লিট ফেস্ট, বেঙ্গল শাস্ত্রীয় সংগীতের মতো সাহিত্যের বড় বড় উদ্যোগগুলোতে সবসময় অবদান রেখে গেছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। 

তরুণদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারলে সামাজিক পরিবর্তন দ্রুত হবে বলে বিশ্বাস করতেন তিনি। সে লক্ষ্যেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। দেশে উচ্চ শিক্ষার প্রসারে এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সাদাফ সায মঞ্চে ডেকে নেন স্যার ফজলে হাসান আবেদের জামাতা ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ও স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনীকার স্কট ম্যাকমিলানকে। ম্যাকমিলানের বই ‘হোপ ওভার ফেইথ- ফজলে হাসান আবেদ অ্যান্ড সায়েন্স অব এন্ডিং গ্লোবাল পোভার্টি’ আজ লিট ফেস্টে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। 

আজীবন নিভৃতাচারী স্যার ফজলে হাসান আবেদের অনুলেখক ছিলেন স্কট ম্যাকমিলান। অনুষ্ঠানে আসিফ সালেহ তরুণ প্রজন্মকে বইটি পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। স্যার ফজলে হাসান আবেদের দেখানো পথেই ব্র্যাক সবসময় দারিদ্র্যের দূরীকরণ ও দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়নে কাজ করে যাবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। আসিফ সালেহ কীভাবে ব্র্যাকে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদের মাধ্যমে সে গল্পও শোনান তিনি।