চট্টগ্রামে বছরে ১৯১১ অগ্নিকাণ্ড, মৃত্যু ৬৫ জনের

চট্টগ্রামে বেড়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। গত এক বছরে এক হাজার ৯১১ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। আহত ও অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন ২৫৯ জন। এসব অগ্নিকাণ্ডে ৪৩ কোটি ৪৮ লাখ তিন হাজার ৪৫০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশ ঘটেছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে, ২০ শতাংশ চুলার আগুন থেকে, বাকিগুলো বাসারবাড়ির আগুন, অসাবধানতা ও অসতর্কতার কারণে বিভিন্নভাবে ঘটেছে।

সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি মধ্যরাতে রান্নাঘরের চুলা থেকে ছড়িয়ে পড়া আগুনে তছনছ হয়ে গেছে রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নের মহাজন পাড়ার সিএনজি অটোরিকশাচালক খোকন বসাকের পুরো পরিবার। ছয় জনের পরিবারের পাঁচ জনই আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। যেখানে ছিল খোকন বসাকের মা-বাবা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। দগ্ধ হয়ে খোকন বসাক চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।

বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০২২ সালে এক হাজার ৯১১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ৪৩ কোটি ৪৮ লাখ তিন হাজার ৪৫০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১১৮ কোটি ৭২ লাখ ৬৭ হাজার ২১৪ টাকার জিনিসপত্র। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৬৫৯টি, কুমিল্লায় ৪৯০টি, নোয়াখালীতে ৩৭২টি, রাঙ্গামাটিতে ১৭০টি, বান্দরবানে ৩০টি ও কক্সবাজারে ১৯০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।  

একই সালে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ৬৫ জন। অগ্নিদগ্ধ ও আহত হয়েছেন ২৫৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন ৫৮ জন এবং আহত হয়েছেন ২৫২ জন। কুমিল্লায় মারা গেছেন চার জন, আহত হয়েছেন ছয় জন। নোয়াখালীতে মারা গেছেন দুজন এবং আহত হয়েছেন একজন। কক্সবাজারে মারা গেছেন একজন।

২০২২ সালে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে। চার জুন অগ্নিকাণ্ডের পর বিস্ফোরণে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের হিসাবে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ২৯৩ জন। তবে পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৫১। আহত দুই শতাধিক। তাদের মধ্যে অনেকে হাত-পা ও চোখ হারিয়েছেন। অনেকে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আগের তুলনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি। ঘটনাগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশ ঘটেছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে, ২০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে চুলার আগুন থেকে, বাকিগুলো বিভিন্নভাবে ঘটেছে।’

বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বিভাগে এক হাজার ৯১০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২০ কোটি ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৪০৬ কোটি ৯৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকার মালামাল। এসব অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জনের মৃত্যু ও ৬০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৬৭০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাত কোটি ৪০ লাখ ৮২ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে ৪৭ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার মালামাল। আগুনে পুড়ে মারা গেছে সাত জন, আহত হয়েছেন ১৯ জন।

চট্টগ্রামে বস্তিতে আগুন

একই বছর কুমিল্লায় ৬৩৫টি অগ্নিকাণ্ডে ছয় জনের মৃত্যু ও ২০ জন আহত হয়েছেন। নোয়াখালীতে ২৯৮টি অগ্নিকাণ্ডে একজনের মৃত্যু ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। রাঙ্গামাটিতে ৯৭টি অগ্নিকাণ্ডে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বান্দরবানে ৪০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারে ১৭০টি অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের মৃত্যু এবং আট জন আহত হয়েছেন। 

অসাবধানতা ও অসতর্কতার কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. আনিছুর রহমান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে, দ্বিতীয়ত চুলার আগুন থেকে। বাকিগুলো বাসাবাড়িতে ঘটেছে। রান্নার পর চুলা বন্ধ করা হয়েছে কিনা একটু সচেতনভাবে তদারকি করলেই এসব অগ্নিকাণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। চুলার আগুন থেকে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গ্রামে এবং বস্তিতে। পাশাপাশি বাসাবাড়ির বৈদ্যুতিক তার ভালো আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখলেই শর্টসার্কিট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।’