চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় ছাত্রলীগ নেতা বললেন, ‘প্রক্সি নিয়ে বলায় ষড়যন্ত্র’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি অপূর্বের বিরুদ্ধে সামিউল নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে তিন হাজার টাকা কেড়ে নেওয়া অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে হলের ২১৪ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তন্ময়ের বিরুদ্ধে প্রক্সি জালিয়াতি বিষয়ে মিডিয়াতে কথা বলায় রুপমের (তন্ময়ের অনুসারী) মাধ্যমে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট নাটক সাজানো হচ্ছে।

সামিউল ইসলাম ফোকলোর বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শাহ মখদুম হলের ২১৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী তিনি। এক সময় হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রামিম আহমেদ রুপমের সঙ্গে রাজনীতি করতেন।

হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে সামিউল ইসলাম উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে হল সভাপতি অপূর্ব অনুসারীদের নিয়ে তার কক্ষে প্রবেশ করে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাৎক্ষণিক টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। একপর্যায়ে ম্যানিব্যাগে থাকা তিন হাজার ৭৭৫ টাকা জোর করে কেড়ে নেন। তার বাসায় কল করে বাকি টাকা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা করে বিকাশে নিতে বলেন। তখন সামিউল জানান, তার বাবা নেই, সে খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালান।

অভিযোগপত্রে তিনি আরও দাবি করেন, অপূর্ব ও তার অনুসারীরা কোনও কথা না শুনে তার মা-বাবা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে মেঝেতে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুসি মারতে থাকেন। যাওয়ার আগে শুক্রবার বাকি টাকা দিতে না পারলে দুপুরের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেন। এ সময় তারা হুমকি দিয়ে  বলেন, ‘এসব বিষয় কেউ জানতে পারলে লাশও তোর পরিবার খুঁজে পাবে না। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো মার্ডার (হত্যা) হইছে সব ফাও।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘হলের সাধারণ সম্পাদক রুপমের মাধ্যমে তিন মাস আগে সামিউল ২৫৬ নম্বর রুমে ওঠেন। সে রুপম ও মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের রাজনীতি করেন। তন্ময়ের বিভাগের ছোট ভাই।  কিছু দিন আগে রুপম ওই ছেলে এক মাসের কথা বলে আমার নিয়ন্ত্রণের থাকা ২১৪ নম্বর কক্ষে তোলেন। কিন্তু আড়াই মাস হলেও ওই কক্ষে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি ওই সিটে আমার এক ছোট ভাইয়ের ব্যাগ রাখতে চাইলে সে বলে এ কক্ষে তার অ্যালোট (বরাদ্দ)। এই নিয়ে হালকা বাকবিতণ্ডা হয়েছে। মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’

অপূর্বের দাবি, গত বছর ভর্তি পরীক্ষার সময় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তন্ময়ের বিরুদ্ধে প্রক্সি জালিয়াতি অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তন্ময় তার অনুসারী রুপমকে তার বিরুদ্ধে লাগিয়েছে।

রাজনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি হল প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে আবাসিকতা পেয়েছি। তবে একসময় রুপম ভাইয়ের রাজনীতি করতাম। এখন রাজনীতি করি না।’

হলের সাধারণ সম্পাদক রামিম আহমেদ রুপম বলেন, ‘সামিউল কখনও আমার রাজনীতি করেনি। তবে তার সঙ্গে আমার আগে থেকে পরিচয় রয়েছে।’

রুপম দাবি করেন, ‘আমার বাবা খুব অসুস্থ। আমি মাসখানেকের বেশি সময় বাসায় অবস্থান করছি। রংপুরে থেকে আমি কীভাবে ষড়যন্ত্র করবো? সে (অপূর্ব) মূলত তার অপকর্ম ঢাকতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি তন্ময়ের রাজনীতি করি না। কিবরিয়ার ভাইয়ের রাজনীতি করি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘যেহেতু এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। তাই আমরা দুই পক্ষের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, ‘যতটা অভিযোগ করা হচ্ছে, আসলে বিষয়টা ততটাও না। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের বিষয় থেকে এমনটা ঘটতে পারে। তবে আমরা দুইপক্ষকে ডেকে তদন্ত শুরু করেছি। আশা করছি তদন্তের মধ্য দিয়ে মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। আর তখন আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’