Relationship Problem: আমার বউ শুধু অন্তর্বাসে বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়, ছেলেছোকরারা বাইরে থেকে হাঁ করে দেখে

এই সমস্যাটির কথা কীভাবে জানাব, বুঝতে পারছি না। আমি নিজেও জানি না, এটি আদৌ কোনও সমস্যা কি না। কিন্তু তার পরেও এর সমাধান জানা খুব দরকারি। আমার স্ত্রী, আমার জন্য খুবই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার একটি বিশেষ অভ্যাস আমায় নানা ধরনের বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলছে। 

আমাদের বিয়ে হয়েছে বছর খানেক হল। কর্মসূত্রে আমাদের পরিচয় হয়েছিল। মাস ছয়েক মেলামেশার পরে আমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। কারও সঙ্গে এক ছাদের তলায় দিনের পর দিন না কাটালে, তাঁর সম্পর্কে পুরোপুরি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমার স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের আগে ‘প্রেম-পর্ব’-এ তার এই অভ্যাসটির কথা জানতে পারিনি। পরে জানতে পারলাম। 

আমাদের বিয়ের পর থেকেই আমরা একসঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকি। আমার বাবা-মা এবং শ্বশুর-শাশুড়িরা অন্যত্র থাকেন। ফলে এই ফ্ল্যাটে শুধু আমরা দু’জন বাসিন্দা। আমার স্ত্রীও চাকুরিজীবী। বাড়িতে আর কাউকে রাখার দরকার পড়ে না। আমরা দরজায় তালা লাগিয়েই অফিস যাই। বাড়ি আসি।

বিষয়টি প্রথম আমার জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই ফ্ল্যাটে একসঙ্গে থাকতে শুরু করার মাস খানেকের মধ্যেই। সে দিন কোনও একটি কারণে আমার স্ত্রীর অফিস ছুটি ছিল। কিন্তু আমার অফিস ছিল। ফলে আমি বেরিয়ে যাই। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বেল বাজাই। আমার স্ত্রী দরজা খোলে। আমি ঘাবড়ে যাই। দেখি, সে শুধু অন্তর্বাস পরে দরজা খুলছে। ভাগ্য ভালো, তখন সিড়ির মুখে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না। নাহলে খুবই অস্বস্তিকর অবস্থা হত।

বিষয়টি নিয়ে খুব একটা চাপ লাগেনি। কারণ প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি রোম্যান্টিক মনে হয়েছিল। তবে ঘরে ঢুকে দেখি, জানলার পর্দা খোলা। বাইরে থেকে ঘরের ভিতরে দেখাই যাবে। আমাদের ফ্ল্যাটটা ছয় তলার উপরে। ফলে রাস্তা থেকে অবশ্য ঘরের ভিতর পুরোপুরি দেখা সম্ভব নয়, কিন্তু উলটো দিকের ফ্ল্যাটের কেউ চাইলে কষ্ট করে হলেও এদিকে দেখতেই পারেন। সঙ্গে সঙ্গে পর্দা টেনে দিই। আর হেসে বলি, একটু সতর্ক হয়ে রোম্যান্টিক হওয়াই ভালো।

যদিও দ্রুত সেই ভুল ভাঙে। বিষয়টির সঙ্গে রোম্যান্টিকতার কোনও সম্পর্ক নেই। বুঝি, এটি ওর অভ্যাস। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পরে এবং ছুটির দিনে প্রায় সারা দিনই ওকে দেখি, শুধু অন্তর্বাস পরে ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে। কিছু বললেই বলে, এভাবে থাকতেই ওর ভালো লাগে। 

সবচেয়ে আতঙ্ক হয় সন্ধ্যার পরে। কারণ, মনে হয়, বাইরে থেকে কেউ চাইলেই ঘরের মধ্যে দেখতে পাবেন। আর তখন কী বিচ্ছিরি কাণ্ডটাই না হবে! এবং সেই ঘটনা এক দিন সত্যি হল।

সেদিন সন্ধ্যায় কী একটা মনে করে, হঠাৎ ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিয়েছি। তার পরে একটু দূরের ফ্ল্যাটের জানলার দিকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা তাক করে একটা ছবি তুললাম। ছবিটা জুম করে দেখি, দুটো মাথার রেখা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সন্দেহই হল, কেউ ওখান থেকে আমাদের বাড়ির দিকে তাকাচ্ছে। 

অনেক দিন ধরেই এই এলাকায় বাস করি। তাই সব ফ্ল্যাটেরই লোকজনের মুখ কমবেশি চেনা। ওই ফ্ল্যাটে দুই অল্পবয়সি ছেলে থাকে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে। ক’দিন বাদে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসার সময়ে সেই দুই ভাইয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হলাম। ওরা দেখলাম, আমায় দেখে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। ওদের চোখেও অস্বস্তি। আমার চোখেও।

এর পরে সেই কথা আমার স্ত্রীকে জানালাম। ও পাত্তা দিল না। বলল, নিজের বাড়িতে এভাবে থাকার স্বাধীনতা ওর আছে। আর ভালো ফিগার যদি কেউ দেখতে চায়, দেখতেই পারে— এতেও নাকি অস্বস্তির কিছু নেই। 

কিন্তু বাড়ি তো আমারও। আমার অস্বস্তির কি কোনও দাম নেই?

আমি এখন কী করব?

 

 বিশেষজ্ঞের জবাব:

 

সম্পর্কবিদ মৌমিতা গুপ্ত এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য:

 

প্রথমেই বলে রাখা দরকার, কে কী পোশাক পরবেন, সেটি একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। ফলে সেই বিষয়ে মন্তব্য করাটা একেবারেই ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টি একটু অন্য রকম। 

যেহেতু আপনিও একই বাড়িতে থাকেন এবং এই ঘটনাটি আপনার নিজেরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাই বিষয়টি আপনার স্ত্রী বুঝিয়ে বলাটা দরকারি।

প্রথমত, এটি বুঝতে হবে, তিনি এমনভাবে থাকেন কেন। তা কি তাঁর নিছক অভ্যাস? নাকি এর পিছনে কোনও শারীরিক কারণও আছে—

ধরা যাক, তিনি এভাবে থাকেন, কারণ অন্য পোশাকে তাঁর গরম লাগে, সেক্ষেত্রে ঘরের তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যদি তিনি এভাবে জানলা খুলেই থাকতে ভালোবাসেন, তাহলে এমনও হতে পারে, এটির সঙ্গে তাঁর কোনও যৌন ফ্যান্টাসির যোগ রয়েছে। 

এই বিষয়গুলি নিয়ে খোলাখুলি দু’জনের মধ্যে কথা হওয়াটা খুব দরকারি। কারণ তাতেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

তবে এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা দরকার। জোর করে কোনও কিছু চাপিয়ে দিতে গেলে, তাতে আখেড়ে কোনও লাভ হয় না। এটি যদি আপনার স্ত্রীর অভ্যাস হয়, তাহলে সেটি জোর করে বদলাতে যাবেন না। তাতে এটির সমাধান তো হবেই না, উলটে পরিস্থিতি বিগড়াতে পারে। তাছাড়া সেটি অনৈতিকও।

বরং আপনার অস্বস্তির কথাটি তাঁকে খুলে বলুন। দরকারে সামনাসামনি বসে কোনও মনোবিদ বা সম্পর্কবিদের পরামর্শ নিন। তাতে সমস্যা কাটবে।