কেন পাহাড়ে আস্তানা গড়েছে জঙ্গিরা?

বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য আস্তানা গড়েছিল নতুন জঙ্গি এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলো। সম্প্রতি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণের আস্তানাগুলো গুঁড়িয়ে দেয় র‌্যাব। এরই মধ্যে কক্সবাজারে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‍্যাবের অভিযানের সময় গোলাগুলির পর নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার শুরা সদস্য, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন পাহাড়ে আস্তানা গড়েছে জঙ্গিরা?

র‌্যাব বলছে, মূলত কয়েকটি কারণে পাহাড়ে আস্তানা গড়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিষয়ে সাধারণ মানুষ সচেতন হওয়ায় বাসাবাড়িতে আশ্রয় পাচ্ছে না, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য পাহাড়কে নিরাপদ মনে করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে তারা কোথাও থিতু হতে পারছে না এবং অন্যান্য শ্রেণির মানুষকে সংগঠনভুক্ত করছে চাচ্ছে জঙ্গিরা।

সর্বশেষ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালায় র‍্যাব-১৫। র‍্যাব-১৫-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সালাম চৌধুরী বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোরে অভিযানে নামে র‍্যাব। এ সময় র‍্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা। আত্মরক্ষার্থে র‍্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আস্তানা থেকে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার শীর্ষ নেতা, শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান, তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞকে অস্ত্র এবং গোলা-বারুদসহ গ্রেফতার করে র‍্যাব।’

অভিযান শেষে সকাল ১০টায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় প্রেস ব্রিফিংয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত আগস্টে কুমিল্লার আট তরুণ হিজরতের নামে আত্মগোপনে চলে যায়। তখন তাদের খুঁজতে গিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার খোঁজ পায় র‍্যাব। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ অক্টোবর বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে ওই জঙ্গি সংগঠনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি মানিককে গ্রেফতার করা হয়। মূলত তার তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনের ৪৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।’

এর আগে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলা অভিযানে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে র‍্যাবের গোলাগুলি হয়। এরপর জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার শুরা সদস্য সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এ সময় বিদেশি একটি অস্ত্র, দেশি দুটি অস্ত্র, তিনটি ম্যাগাজিন, ১১২ রাউন্ড গুলি ও আড়াই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।’

র‌্যাবের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার সামরিক শাখার প্রধান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপনে রয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ভোরে কুতুপালং ৭ নম্বর ক্যাম্পের এ ব্লকে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেরে জঙ্গিরা পাশের পাহাড়ে চলে যায়। র‌্যাব ওখানে অভিযান চালালে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তারা। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়।’

বান্দরবান থেকে গ্রেফতার জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সদস্যরা

জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার সামরিক শাখার প্রধান মাসিকুর রহমান মাসুদ ওরফে রনবীরের নেতৃত্বে তরুণদের পাহাড়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই সংগঠনের ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সামরিক শাখার প্রধানসহ গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হবে।’

জঙ্গিরা কেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আস্তানা গড়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘তারা কেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এলো, তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যোগসূত্র কি? তা খুঁজে বের করবে র‌্যাব। একইসঙ্গে তাদের সংগঠনে কারা কারা রয়েছে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।’

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘গত ২১ অক্টোবর গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়। গ্রেফতারকৃত সাত জনের মধ্যে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার সামরিক শাখার উপ-প্রধান সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক ছিল। মানিকসহ পাঁচ জনের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধানের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্যের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র‌্যাব।’

র‌্যাব সূত্র জানায়, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গত দুই বছরে বাড়িছাড়া ৫৫ তরুণের খোঁজ পায় র‌্যাব। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে আবুল বাশার নামে একজনের নাম ছিল। বাশার সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের সহযোগী ও বোমা বিশেষজ্ঞ। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বাশার র‌্যাবকে জানায়, গত ৩ অক্টোবর যৌথ অভিযান শুরুর পর ৫৫ জনের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড় থেকে পালিয়ে সিলেটে সামরিক শাখার প্রধানের কাছে আশ্রয় নেয়। কয়েকদিন আগে সামরিক শাখার প্রধান রনবীরের সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মগোপন করে বাশার।

আরও পড়ুন-

জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধানসহ দুই জন গ্রেফতার

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান, জঙ্গিদের সঙ্গে গোলাগুলি

র‍্যাবের অভিযানের আগেই কবর থেকে ‘জঙ্গির’ লাশ উধাও

জঙ্গি তৎপরতা কি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে?

পাহাড়ে চিরুনি অভিযান, পিছু হটেছে ‘কেএনএফ’