রাত পোহালেই ঢাবির জগন্নাথ হলে ৭৩ মণ্ডপে সরস্বতীর আরাধনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের মাঠে প্রতিবছরই ধুমধাম করে আয়োজন করা হয় বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর পূজা। দেবীর কৃপা-লাভের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এতে অংশ নেন অসংখ্য ভক্ত। বাংলাদেশে এককভাবে সবচেয়ে বেশি পূজা মণ্ডপ হয়ে থাকে এই হলের আঙিনায়। নানা আয়োজনে হল প্রাঙ্গণে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে দিনভর। এবছরও ৭৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

করোনার কারণে ২০২১ সালে একেবারেই উদযাপন করা হয়নি সরস্বতী পূজা। পরের বছর স্বল্প পরিসরে উদযাপন করা হলেও ছিল না সেই পরিচিত আমেজ। তবে সব আশঙ্কা কাটিয়ে এবার আবারও সেই আবহে পূর্ণ আমেজ ফিরেছে জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজায়। এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে পূজা উদযাপন কমিটি। কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটি ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে মোট ৭৩টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে। রাত পোহালেই এসকল মণ্ডপে দেবীর কাছে প্রার্থনায়রত হবেন দেবীভক্তরা।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৬টায় প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হবে। এরপরে সাড়ে ৭টায় বাণী বন্দনা, ৮টা ১০ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি, সাড়ে ১১টায় প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে পূজার কার্যক্রম শেষ হবে। এর পরে বিকাল ৪টায় অতিথি আপ্যায়ন করা হবে। এছাড়াও পূজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

হিন্দু ধর্মের রীতি অনুসারে, সরস্বতী বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সাদা রাজহাঁসে চেপে দেবী সরস্বতী জগতে আসেন। আর বিদ্যা, বাণী ও সুর পাওয়ার আশায় সরস্বতীর পূজায় নিবেদিত হন পূজারীরা।

পূজা উদযাপন উপলক্ষে দিনরাত পরিশ্রম করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করছেন সংশ্লিষ্টরা। এবছর পূজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট, চারুকলা অনুষদ এবং হল প্রশাসনের কেন্দ্রীয় প্রতিমাসহ মোট ৭৩টি পূজামণ্ডপ বসবে। হল মাঠে বিভাগগুলোর মণ্ডপ, উপাসনালয়ে কেন্দ্রীয় মণ্ডপ এবং চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা হলের পুকুরে বৃহৎ এবং সবথেকে আকর্ষণীয় প্রতিমাটি বসবে। 

চারুকলা অনুষদের ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে এবারের প্রতিমাটি আগের সব প্রতিমার থেকে বড় বলে উল্লেখ করেছেন কারুকার্য বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময় মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘আমাদের তৈরি করা এই প্রতিমাটি হবে আগের তৈরিকৃত সব প্রতিমা থেকে বড়। এটি বসা অবস্থায় আছে এবং উচ্চতা ৩২ ফিট। আমরা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করেছি।’

রয়েছে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এদিকে পূজার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা, পুলিশ, আনসার ও হল প্রশাসনের নিরাপত্তা কর্মীরা কাজ করবেন যাতে কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে। এ বিষয়ে পূজার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. রতন চন্দ্র ঘোষ বলেন, নিরাপত্তার জন্য পূজার সময়ে অতিরিক্ত ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। হলের প্রবেশ পথ, পূজা মণ্ডপের আশেপাশে এবং হলের প্রধান উপাসনালয়ে এসব সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। এই সিসি ক্যামেরাগুলোকে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করা হবে যেন সুযোগসন্ধানী কেউ অপ্রত্যাশিত কিছু করার সুযোগ না পায়। 

পূজা ও সার্বিক বিষয়ে পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, দুই বছর পর আমরা পুরোনো সেই আমেজে ফিরতে পারছি। এটি খুবই আনন্দদায়ক। আমরা ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। পূজা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পূজার পরেরদিন ছোট পরিসরে একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা হবে। এসময় সকলের সহযোগিতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।