Dilip Mahalanabis:ওআরএসের স্রষ্টা প্রচারবিমুখ দিলীপ মহালনবীশের লড়াইয়ের উজ্জ্বল অধ্যায় একনজরে

চিরকালীনই ছিলেন প্রচারবিমুখ। প্রচারের আড়ালে থেকেই করে গিয়েছেন দশের সেবা, দেশের সেবা। এআরএসএর স্রষ্টা সেই চিকিৎসর দিলীপ মহালনবীশকে এবার সম্মানিত করা হয়েছে ২০২৩ পদ্মসম্মানে। মরোণোত্তর পদ্মবিভূষণ সম্মানে তিনি সম্মানিত। 

বয়সজনিত সমস্যায় ৮৮ বছর বয়সে সদ্য ২০২২ সালে প্রয়াত হন এই মহান বিজ্ঞানী তথা চিকিৎসক দিলীপ মহালনবীশ। যাঁকে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানব প্রাণ রক্ষার এক মহাযজ্ঞে অংশ নিতে দেখা যায়।১৯৫৮ সালে মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশের পর সেখানেই শিশুবিভাগে ইন্টার্নশিপ শুরু করেন দিলীপ মহালানবীশ। এরপর ১৯৬০ সালে লন্ডনে ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস চালু হতেই প্রচুর চিকিৎসকের প্রয়োজন পড়ে। সুযোগ পান দিলীপ। এরপর লন্ডনে ডিসিএইচ, এডিনবরা থেকে এমআরসিপি। দীর্ঘ সময় ধরে বিদেশের বুকে চিকিৎসক হিসাবে রোগীদের সেবা করার পর ১৯৬৪ তে দেশে ফেরেন দিলীপ মহালানবীশ। ততদিনে লন্ডনে কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল ফর চিল্ড্রেনে তিনি রেজিস্ট্রার পদে যোগ দিয়ে কর্তব্য পালনে সাফল্য পেয়েছেন। তিনিই প্রথম বাঙালি তথা ভারতীয় যিনি লন্ডনের ওই হাসপাতালে এই পদে ছিলেন। এরপর জনহপকিনস ইউনিবার্সিটি মেডিক্যাল কেয়ার ফেলো পদে যোগ দেন দিলীপ মহালানবীশ। আর সেই সূত্র ধরেই কলকাতায় ফিরে বেলেঘাটা আইডিতে সেই আন্তর্জাতিক হাসপাতালে একটি কেন্দ্রে যোগ দেন এই মহান চিকিৎসক। শুরু হয় ওআরএস ও স্পেশ্যাল মেটাবলিক স্টাডি নিয়ে গবেষণা।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লব দেখেছে গঙ্গা-পদ্মার দুই পাড়ের মানুষ। বহু মানুষ নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে প্রবল যন্ত্রণা বুকে নিয়ে তখন বাংলার অস্থায়ী শিবিরে অংশ নিয়েছেন। সেই সময় বনগাঁ সীমান্তে হাজার হাজার মানুষ ক্যাম্পে কলেরায় আক্রান্ত হন। তাঁদের প্রাণরক্ষারও নেপথ্য নায়ক ছিলেন দিলীপ মহালানবীশ। বাংলার বহু অস্থায়ী শিবিরে কলেরা মহামারীর আকার নেয়। রোগীদের বমি, বিষ্ঠায় বহু ক্যাম্পই হয়ে উঠেছিল অস্বাস্থ্যকর। শোনা যায়, বমি, বিষ্ঠায় এক এক সময় ডুবে যেত জুতো। রোগীকে সুস্থ করার উপায় হিসাবে স্যালাইন তখন ছিল ভরসা। তবে শরীরে ইঞ্জেকশন ফুটিয়ে নয়, এই বাঙালি চিকিৎসক ঠিক করলেন ওরাল মাধ্যমে ফ্লুইডের যোগান দেবেন। জলের সঙ্গে, নুন, চিনি, বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করানো শুরু হল রোগীদের। ওআরএসএর সফল প্রয়োগ সেটাই। প্রচার বিমুখ এই চিকিৎসক তাঁর বাড়িতে সল্টলেকে তৈরি করেছিলেন ‘সোসাইটি ফর অ্যাপ্লায়েড স্টাডিজ’, তবে তাতে সরকারি সাহায্য বা পড়ুয়ার সংখ্যায় অভাবজনিত কারণে প্রতিষ্ঠান এগোতে পারেনি। বহু লড়াই, বহু সাফল্যকে বুকে নিয়ে তিনি না ফেরার দেশে ২০২২ সালের অক্টোবরে পাড়ি দেন। তবে রয়ে গিয়েছে তাঁর সৃষ্টি, তাঁর গবেষণা, তাঁর সেবা। প্রচারিত হয়েছে তাঁর কীর্তি। সেই সমস্ত অধ্যায়কে কুর্নিশ জানিয়ে ২০২৩ সালের পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন এই প্রতিথযশা চিকিৎসক।