Padmashri Pritikana Goswami: অনটনের সঙ্গে লড়াইয়ে হাতিয়ার ছুঁচ-সুতো, প্রীতিকণা বুনেছেন অনেক মেয়ের জীবনও

পদ্মশ্রী পেয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা প্রীতিকণা গোস্বামী। সেলাইয়ের মধ্যমে শুধু শিল্পসৃষ্টির জন্য নয়, নারীর ক্ষমতায়নে জন্যও বটে। যে দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করে তাঁর এগিয়ে চলা, তার সঙ্গে লড়াই করার সাহস জুগিয়েছেন আরও পাঁচজন মেয়েকেও।

গ্রাম বাংলার এক মেয়ের সাদামাটা জীবন যেমন করে শুরু হয়, তেমন ভাবেই শুরু প্রীতিকণা দেবীর জীবন। কিন্তু সংসারে ঝড় নামে বাবার অকাল মৃত্যুর পর। ১৯৭৩ সাল। তখন সদ্য মেট্রিক পাশ করেছেন তিনি। কী করে সংসারের হাল ধরবেন তা চিন্তা করে রাতের ঘুম উড়েছে তাঁর।

সেই সময় এক বন্ধুর বাড়িতে যান তিনি। বন্ধু তখন একটা শাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করছিলেন। সেলাই রেখে খানিক ক্ষণের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সেই বন্ধু। প্রীতিকণা বসে না থেকে খানিকটা সেলাই করে দিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে বন্ধু তো দেখে অবাক। যদিও বন্ধু কিছু বলবেন এই ভেবে প্রীতিকণা সেলাইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে যান। কিন্তু হিরে চিনতে ভুল হয়নি বন্ধুর।

সেই বন্ধু তাঁকে প্রস্তাব দেন কলকাতা গিয়ে কাঁথা স্টিচের কাজ আনতে। যোগাযোগও করিয়ে দেন একটি দোকানের সঙ্গে। সেখানে কাঁথা স্টিচের কাজের শাড়ি বিক্রি হয়। প্রীতিকণা কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। কিন্তু বাড়িতে শাড়ি এনে কাজ করতে গেলে ৫০টাকা জমা রাখতে হয়। তাঁর কাছে রয়েছে মাত্র ৩০ টাকা। সেলাইয়ের কাজে আগ্রহ দেখে মালকিন প্রস্তাব দেন দোকানে বসে কিছু একটা করে দেখাতে। তাঁর হাতের কাজ দেখে অবাক হন দোকানের মালকিন। পিস হিসাবে সেলাই করার কাজ দেন তিনি। সেই শুরু। তারপর ১৫ বছর ধরে চলে সেই সেলাইয়ের কাজ।

দুই মেয়ের সঙ্গে প্রীতিকণা।

(টুইটার)

বিয়ে হয়। ঘরে আসে দুই মেয়ে। সেলাইয়ের কাজ বন্ধ করেননি প্রীতিকণা। মোড় ঘোরে ১৯৯০ সালে। ক্রাফট কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের তৎকালীন চেয়ারপার্সন প্রীতিকণাকে একটি ওর্য়াকশপ খোলার পরামর্শ দেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলার তাঁরা কাছে কাঁথা স্টিচে কাজ শিখে স্বনির্ভর হতে শুরু করেন। আর ফিরে তাকাতে হয়নি প্রীতিকণাকে। ২০০১ সালে সূচি শিল্পের কাজের জন্য জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। রাষ্ট্রপতি কালামের কাছ থেকে পুরস্কার নেন প্রীতিকণা গোস্বামী।

তাঁর কাজকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন এনআইএফটি পাশ ফ্যাশন ডিজাইনার মেয়ে মহুয়া লাহিড়ি। এবার তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর থেকে নেবেন পদ্মশ্রী পুরস্কার।