ভালোবাসা দিবসে ‘গরুকে আলিঙ্গনের’ আহ্বান ভারত সরকারের

ভালোবাসা দিবসে ‘পশ্চিমা’ রীতি উপেক্ষা এবং দিনটিতে গরুকে আলিঙ্গন করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারত সরকার। একই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার দিনটিকে ‘গরু আলিঙ্গন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

হিন্দু ধর্মে গরুকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু ধর্মালম্বী এবং তারা এই পশুকে পবিত্র মনে করেন।

ভারত সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গরুকে আলিঙ্গন ‘মানসিক সমৃদ্ধি’ এবং ‘আমাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্ঠিক সুখ’ বৃদ্ধি করবে।

সরকার বলছে, নতুন ঘোষিত গরু আলিঙ্গন দিবসের লক্ষ্য হলো ‘পশ্চিমা সভ্যতার চাকচিক্য’ ঠেকাবে।

গত দশকে ভারতের অর্থনীতিতে ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন’স ডে প্রবেশ করেছে। মূলত দিবসটি খ্রিষ্টানদের উৎসবের দিন থেকে উদ্ভূত হয়েছে। তরুণদের মধ্যে দিবসটি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। ফুলের তোড়া, পুতুল, হৃদয় আকৃতির উপহার এবং চটকদার রোমান্টিক আয়োজনের ব্যাপক বিপনন কর্মসূচি এই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

কিন্তু ভারতে যখন পেশীবহুল হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতি প্রভাবশালী হচ্ছে তখন পশ্চিমা ঘরানার ছুটির দিন ও ঐতিহ্য, যেমন- ভালোবাসা দিবস ক্রমেই সমালোচনার মুখে পড়ছে ‘নীতিভ্রষ্ট মূল্যবোধ’ প্রচারের কারণে।

হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর কর্মীরা নারীদের ওপর নৈতিক পুলিশের ভূমিকা পালনে অবতীর্ণ হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসের কার্ড বিক্রির দোকানে হামলা চালাচ্ছে। এমনকি একে অন্যের হাত ধরে থাকা যুগলরা তাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ভালোবাসা দিবসবিরোধী বাগাড়ম্বরের প্রধান ভুক্তভোগীতে পরিণত হয়েছেন নারীরা। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের অভিযোগ, দিবসটি নারীদের অশ্লীলতা

অভিযোগ করে যে ছুটি নারীর অশ্লীলতা এবং অশালীন আচরণের প্রতি উৎসাহিত করছে।

ভারতজুড়ে গরুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের নীতির সর্বশেষ উদ্যোগ হলো গরু আলিঙ্গন দিবস। রাজধানী দিল্লিসহ ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যে গরু জবাই, গরুর মাংস বিক্রি ও গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।

বিজেপির সংশোধিত পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় গরু কমিশন প্রণীত ‘গরু বিজ্ঞান’ বিষয়ে প্রস্তাবিত জাতীয় পরীক্ষা ২০২১ সালে সমালোচনার মুখে স্থগিত করা হয়েছিল।   

ভারতের পাঠ্যপুস্তকেও প্রশ্নবিদ্ধ দাবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, বিদেশি গরুর তুলনায় ভারতীয় গরুর আবেগ বেশি। দেশি গরুর কুঁজে জাদুকরী শক্তি রয়েছে এবং গোবর তেজস্ক্রিয়তা ঠেকাতে পারে।