State Budget 2023: কেন্দ্রের শর্ত বাড়ছে, বাড়ছে রাজকোষে ঘাটতি, সামলে কেমন হবে রাজ্য বাজেট?

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা রাজ্য বাজেট পেশ হবে। বাজেট পেশ করতে পারেন অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তবে নানা কারণে এবার রাজ্য বাজেটে ভারসাম্য বজায় রাখা বেশে কঠিন কাজ বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এমনিতে রাজ্যের ঘাড়ে রয়েছে বিপুল ঋণের বোঝা। গোদের উপর বিষ ফোড়ার মতো রয়েছে রাজকোষ ও রাজস্ব ঘাটতি। এ সবের মধ্যে আবার কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা দেওয়ার শর্তও ক্রমশ বাড়িয়ে চলছে। ফলে এবার রাজ্য বাজেটে বড় পরীক্ষা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কৃষক বন্ধু, লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী এবং রূপশ্রীতে রাজ্যের খরচ হয় নিজস্ব রাজস্ব-আয়ের ২৩.৮ শতাংশ। এছাড়া স্বাস্থ্যসাথী, বিনামূল্যে রেশন, অন্যান্য অগ্রসর শ্রেণির ভাতা, সাইকেল ও ট্যাব প্রদান, ক্লাবকে টাকা দেওয়া ইত্যাদি ব্যয়ের সঙ্গে বেতন পেনশন, প্রশাসনিক খরচ, পুরানো ঋণের সুদ মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থ খরচ হয়ে যায়। এর সঙ্গে গলায় কাঁটা ফোটার মতো আদালতে রয়েছে ডিএ মামলা। এই বিষয় মাথায় রেখে ভারসাম্য বজায় রেখে রাজ্য বাজেট করতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজস্ব এবং রাজকোষে যা ঘাটতি হচ্ছে তা মিটবে কী ভাবে? অর্থনীতিবিদরা বলছেন এই ঘাটতি মেটাতে রাজ্যকে ঋণ নিতে হবে। না হয় নিজস্ব আয় বাড়াতে হবে। তবে যেখানে ইতিমধ্যে গলা অবধি ঋণ রয়েছে রাজ্যের, সেখানে আবার নতুন করে ঋণ না নেওয়াই বাঞ্ছনীয়। তবে দ্বিতীয় পথ হিসাবে আয় বাড়ানোর পথে হাঁটতে পারে রাজ্য। বাজেটে কোন পথে আয় বাড়ানোর দিশা দেওয়া হয় সে দিকে নজর থাকবে।

কেন্দ্রের শর্ত

প্রসঙ্গত, কেন্দ্র রাজ্যকে জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কার শর্ত মানলে আগামী ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদের (জিএসডিপি) ৩.৫ শতাংশে রাখা যাবে। সংস্কার না করলে তা হবে ৩ শতাংশ।। চলতি ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে সেই সীমা ৪ শতাংশ।

কেন্দ্রের নীতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থনীতিবিদদের একাংশ। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘নিজেদের রাজকোষ ঘাটতির সীমা আগামী বছরের জন্য ৫.৯ শতাংশে রেখেছে কেন্দ্র। অথচ রাজ্যগুলির জন্য ঘাটতি করে ৩.৫ শতাংশে রাখতে বলা হচ্ছে। এ ভাবে রাজ্যগুলিকে চাপে রাখার কোনও যুক্তি নেই।’ অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ীর মতে, ‘সব রাজ্যের জন্যই এক নিয়ম। পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা কী করে হবে। রাজ্যকে রাজকোষে ঘাটতি কমাতে হলে খরচ কমাতে হবে।’

খয়ারতির কী হবে?

দুর্গাপুজো, খেলা-মেলা ইত্যাদিতে বিপুল অর্থ অনুদান হিসাবে রাজ্য ক্লাব সংগঠগুলিকে দিয়ে থাকে রাজ্য। অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন রাজকোষে ঘাটতি একটা বড় কারণ হল এই খয়ারতি। একে কমাতে না পারলে আগামী আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতিকে ৩ শতাংশের মধ্যে রাখা যাবে না। ফলে কেন্দ্রীয় অনুদান পেতে সমস্যা হবে। তখন জটিলতা আরও বাড়বে। তবে, রাজ্যের যুক্তি, এই খয়রাতির পিছনেও একটি অর্থনীতির বিজ্ঞান রয়েছে। মেলা-পুজো-উৎসবে অর্থনীতির গতি জোরদার হয়। তাই একে মদত দিয়ে আসলে আর্থিক গতি বজায় রাখা যায়।

তবে অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কেন্দ্রের বিদ্যুৎক্ষেত্র সংস্কার সংক্রান্ত যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁর কথায়,’ফিসকাল-অনিয়ম করিনি। বিদ্যুৎক্ষেত্রেও সমস্যা নেই। কেন্দ্রের উচিত নিজেদের পরিচালিত রাজ্যগুলির দিকে নজর দেওয়া ।’ সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। বছর পেরোলে লোকসভা নির্বাচন। বাজেট পেশের সময় সে দিকেও নজর থাকেব অর্থমন্ত্রীর।