একুশ স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতিসত্তার বিকাশে এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান হিসেবে কাজ করেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার দিনই নয়, আমাদের স্বাধীকার, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রথম সংগ্রামের দিন।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারা এমন মনোভাব ব্যক্ত করেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা শহীদদের আত্মার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। আজ রাজনৈতিক দলগুলো দিবসটিকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। পাশাপাশি অনেক দলের পক্ষ থেকে মাতৃভাষা দিবস নিয়ে আলোচনা সভার অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে।

বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উল্লেখ করেন, ‘অধিকার আদায় এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে ভাষা শহীদরা আমাদের প্রেরণার উৎস। প্রকৃতপক্ষে এই মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতিসত্তার বিকাশে এবং একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান হিসেবে কাজ করেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি শুধু মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার দিনই নয়, আমাদের স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রথম সংগ্রামের দিন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করে তারা আত্মত্যাগের যে গৌরবদীপ্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা অবতীর্ণ হয়েছি স্বাধীনতা যুদ্ধে। প্রতিষ্ঠা করেছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বজাত্যবোধ ও অধিকারবোধের চেতনা পরিপূর্ণতা দান করেছিল মহান ২১ ফেব্রুয়ারি।’

বিএনপির মহাসচিব উল্লেখ করেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-একুশের চেতনার উত্তরাধিকারী হয়ে এদেশের সংগ্রামী মানুষকে সাথে নিয়ে আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারে দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক সরকারকে পরাজিত করে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবো।’

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘শোক, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার আখরে লেখা আমাদের মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অবিনাশী চেতনায় তাৎপর্যময় এই দিনে ভাষা আন্দোলনে বীর শহীদদের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। বিনম্র শ্রদ্ধায় ভাষা আন্দোলনে বীর শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। মহান এই দিনে দেশের প্রতিটি নাগরিক এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত বাংলাভাষীদের প্রতি জানাচ্ছি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বের সকল ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।’

তিনি বলেন, ‘একুশের অবিনাশী চেতনা আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অসীম অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহস ও শক্তির অনন্য উৎস ছিল আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলন। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন সারা বিশ্বে ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বিজয়ের প্রতীক হয়ে থাকবে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এই জাতিগতভাবে নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ভাষাভিত্তিক আধুনিক ও রাজনৈতিক বাঙালি জাতীয়বাদের শক্ত ভিত্তি গড়ে উঠেছিল। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি দ্বি-জাতি তত্ত্বের তমসাচ্ছন্নতা ছিন্ন করে আলোর পথ দেখেছিল এবং বাঙালি জাতীয়াবাদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক জাতি হিসেবে গড়ে উঠেছিল।’