থামছে না লাশ নিতে আসা স্বজনদের কান্না-আর্তনাদ

মাদারীপুরের শিবচরের এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের হাহাকার আর আর্তনাদে এক করুণ পরিবেশ সৃষ্টি হয় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রবিবার (১৯ মার্চ) বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে স্বজনরা আসতে শুরু করেন হাসপাতালে। শনাক্তের পর বুঝে নিচ্ছেন স্বজনের লাশ। অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা দিচ্ছেন বাড়ির পথে।

দুপুরে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়। সেখান থেকে বিকাল পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ বুঝে নিয়েছেন স্বজনরা।

এদিকে,  শনাক্তের পর বাবার লাশ নিতে এসে সন্তানের আহাজারি, স্বামীর জন্য স্ত্রীর আর্তনাদ, সন্তানের জন্য পিতা-মাতার, ভাইয়ের জন্য ভাইয়ের চিৎকার আর কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশের বাতাস। ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন আশেপাশের মানুষ, হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীরা।

গোপালগঞ্জের সজীব শেখের মরদেহ শনাক্ত করেন তার ভাই ইমরান। ভাইয়ের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার কসবা উপ‌জেলার অনন্তপুর গ্রা‌মের জা‌হিদ খানের মরদেহ শনাক্ত করেন ছেলে রাতুল খান। বাবাকে হারানো বেদনায় বারবার মূর্ছা যান তিনি।

গোপালগঞ্জ থেকে এসেছিলেন নিহত মোস্তাকের স্ত্রী জোনাকি বেগম। স্বামীর লাশ শনাক্তের পর নির্বাক হয়ে যান তিনি। দুই শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। মায়ের কান্নার সঙ্গে কাঁদছিল তারাও। আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘আমার সব শ্যাষ হইয়া গেলো। আমার ছোট ছোট দুই পোলারে এতিম কইরা ওনি চইল্লা গেলো। ওগো আমি কী বুঝ দিমু। আল্লাহ আমার মরণ দিলো না ক্যান? আমার স্বামীকে তোমরা ফিরাইয়া দাও।’

স্থানীয় বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, ‘হাসপাতালে কান্না আর আহাজারি। শোকে স্তব্ধ চারপাশ। স্বজন হারানোদের কান্না আমাদেরও স্পর্শ করে গেছে। আশেপাশের অনেকেই হাসপাতালে ছুটে গেছেন দেখতে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোদের কান্নায় আমাদের চোখেও পানি চলে আসে। খুবই হৃদয় বিদারক!’

এদিকে রবিবার বিকালে শেষ হয় উদ্ধার অভিযান। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম জানান, বাসের মধ্যে আর কোনও মরদেহ না থাকায় বিকালে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় উদ্ধার অভিযান। শিবচরে নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। স্বজনরা মরদেহ বুঝে নিয়েছেন। তবে সন্ধ্যার দিকে আরও একজনের মরদেহ তার স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।