Ugadi Festival 2023: কাল উগাদি, দক্ষিণ ভারতের এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে বহু অজানা ইতিহাস

উগাদি উৎসব হল দক্ষিণীদের নতুন বছরের সূচনার উৎসব। অর্থাৎ নববর্ষ। নতুন কিছুর শুরু সব সময়ই আমাদের আনন্দ দেয়। যা কিছু ছিল পুরানো, তাকে আবার নতুন করে ভাবার সুযোগ আসে। তাই সেটা যদি ‘উগাদি’ হয় তাহলে আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়। পয়লা বৈশাখ, ফার্স্ট জানুয়ারির মতোই উগাদি হল দক্ষিণীদের নববর্ষ। উগাদি শব্দটি এসেছে যুগ মানে বছর এবং আদি মানে শুরু থেকে। অর্থাৎ বছরের শুরু।

চৈত্রমাসের প্রথম দিনে এটি পালিত হয়। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে পড়ে মার্চ কিংবা এপ্রিল মাস। অন্য সব উৎসবের মতোই এটিও পালন করা হয় আনন্দের সঙ্গে। শীতের রুক্ষ দিনগুলিকে পেছনে ফেলে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। নতুন পাতায় ভরে ওঠে গাছ, মাঠ ভরে ওঠে নতুন ফসলে। চারপাশে মনোরম আবহাওয়ায় মন থাকে ফুরফুরে। আমাদের কৃষক ভাইয়েরাও এই সময় নতুন ফসলের আশার আনন্দে থাকে মশগুল। এই উৎসব আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে যেন একাত্ম করে তোলে।

ইতিহাস ছাড়া কোনও কিছুরই অস্তিত্ব থাকে না। আর ভারতবর্ষ হল সেই ইতিহাসের আঁতুড়ঘর। তাই এখানে পালিত হওয়া সব উৎসবেরই আছে একটা মজাদার কাহিনি, আছে পৌরাণিক ইতিহাস। যে কাহিনির ওপর নির্ভর করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দাঁড়িয়ে থাকে। বিশ্বাসের জোরেই উৎসবগুলি পালিত হয় মহাসমারোহে। তেমনই উগাদি উৎসবও অনেক প্রাচীন। এই উৎসব বহুকাল ধরেই জাকজমকপূর্ণভাবে পালিত হয়ে আসছে দক্ষিণ ভারতে।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই দিনেই ব্রহ্মা মহাবিশ্বের সৃষ্টি করেছিলেন। সময়ের হিসেব রাখার জন্যে তৈরি করেন দিন, মাস, বছর। এই কারণেই উগাদিকে বলা হয় এক নতুন যুগের সূচনা। আবার বলা হয়, এই দিনই নাকি ভগবান বিষ্ণু পৃথিবীতে তাঁর প্রথম অবতার নেন– মৎস্য অবতার। ভগবান রামচন্দ্রের এইদিনেই হয় রাজ্যাভিষেক পাশাপাশি এই উৎসব কৃষকদের কাছেও বিশেষ সম্মানের। এই দিন তাঁরা নতুন ফসল বাড়ি নিয়ে আসে। আবার ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, সর্বপ্রথম এই উৎসব হয় পালিত হয় সাতবাহন রাজ গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর আমলে। আবার এই দিনই সম্রাট বিক্রমাদিত্য আক্রমণকারীদের পরাজিত করেছিলেন।

পয়লা বৈশাখে যেমন নতুন কাজ শুরু করা হয়, তেমনই এই দিন দক্ষিণ ভারতের মানুষেরা নতুন কাজ শুরু করে। যেমন, বাড়ির জন্যে নতুন কিছু কেনা। নতুন গাড়ি কেনা বা বাড়ির ভিত পুজো সবটাই সেরে নেন এই পবিত্র দিনে। এই উৎসবের আছে একটি সুন্দর মানে। এই উৎসব আমাদের উপলব্ধি করায় কীভাবে অতীতের করা সব ভুল ভুলে যেতে হয়। এগিয়ে যেতে হয় ভবিষ্যতের দিকে। জীবনকে কীভাবে ইতিবাচক ভাবে শুরু করা যায়।

উগাদি উৎসবের গুরুত্ব

এই উৎসব দক্ষিণীদের কাছে আলাদাই গুরুত্ব বহন করে। একদিকে চৈত্রমাস। অন্যদিকে বসন্তের মতো ঋতু। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ। সবমিলিয়ে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এই সময় দক্ষিণ ভারতের সব মানুষ এক বিশেষ পানীয় পান করে। যার নাম পাচাদি। তেঁতুল, গুড়, আম, নিমফুল মিশিয়ে বানানো হয়। যা শরীরকে পরিবর্তিত আবহাওয়া থেকে যেমন বাঁচায়, তেমনই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাই সবাই মিলে আনন্দের করে এই পানীয় পান করা হয়।

উৎসব মানেই ভুরিভোজ, উগাদিতেও তৈরি হয় হরেকরকম খাবার– ‘বোরেলু’ নামে পরোটা, ডাল, গমের আটা, হলুদ ও গুড় মিশিয়ে ভাজা হয়। এছাড়া, বোভাটটু বা পোলেলু, অথবা পুরান পোলি নামে বিশেষ খাবার তৈরি হয়।

পালনের আচার অনুষ্ঠান

পুজো মানেই পবিত্র। আর সেটা যদি হয় নববর্ষ তাহলে বাড়তি কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হয়। মনে করা হয় এই দিন নিয়ম করে পুজো করলে স্বয়ং ভগবানের অশেষ কৃপা মেলে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দৈনন্দিনের সমস্ত কাজকর্ম সেরে বেসন আর তেল মেখে স্নান সেরে নিতে হয়। তারপর নতুন কাপড় পরে পুজোয় বসতে হয়। সুগন্ধি ফুল, অক্ষত, ধূপ সহকারে পুজো করতে হবে ব্রহ্মার।

বর্তমানে অবশ্য আধুনিকতা মিশেছে এই উৎসবে। মানুষ আজ বড্ড বেশি ব্যস্ত। তাই আগের মতো উপভোগ করার সময় পায় না। তবে উৎসবের ওপর তার বিন্দুমাত্র রেশ পড়েনি। সব আধুনিকতাকে ছাপিয়ে ধরে রেখেছে তার পুরানো ঐতিহ্য। এই উৎসব দক্ষিণ ভারতীয়দের কাছে পবিত্র উৎসব। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব। আনন্দ, খাওয়া-দাওয়া, হইহুল্লোড়– সব মিলিয়ে জনপ্রিয় উৎসব হিসেবে সমাদৃত ভারতবাসীর কাছে।