জুনে এলসি ও ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে: সালমান এফ রহমান

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার আমদানি কার্যক্রমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ এনেছে। তবে আমাদের রিজার্ভের ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি।  আশা করা যায়—আগামী জুনে এলসি ও ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

বুধবার (২২ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪ যৌথভাবে আয়োজিত লাইভ “প্রাক-বাজেট আলোচনা: প্রেক্ষিত বেসরকারি খাত”  অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং এফবিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বিশেষ অতিথি ছিলেন। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ। আলোচনা সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। 

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যকার কর হারের ব্যবধান কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানির করপোরেট করের হার আরও ২.৫% কমানোর আহ্বান জানান।

এছাড়াও কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ, কর ও মূসক সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ ব্যবসাবান্ধব অটোমেটেড কর ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার সাত্তার। খেলাপি ঋণ হ্রাসের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ প্রণয়নের পাশাপাশি এডিআরের প্রয়োগ, অর্থঋণ ও ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের সংস্কার, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারি খাতে ব্যয় হ্রাস এবং মূল্যস্ফীতির সাথে সঙ্গতি রেখে আমানতের সুদহার ও ঋণের সুদের হার নির্ধারণের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি। এছাড়াও তিনি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ, অবকাঠামো খাত ও জাতীয় লজিস্টিক খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ আকর্ষণে দীর্ঘমেয়াদী ফিন্যান্সিয়াল ম্যাপিং প্রবর্তনের আহ্বান জানান। সেই সাথে এলডিসি উত্তর সময়ে নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে রফতানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি চামড়া, পাট, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল প্রভৃতি সম্ভাবনাময় খাতে আগামী বাজেটে বিশেষ সুবিধা প্রদানেরও দাবি জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি।       

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ফেডারেল ব্যাংক কর্তৃক ডলারের সুদ হার বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার আমদানি কার্যক্রমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করেছে ফলে আমাদের রিজার্ভেও ওপর তেমন প্রভাব পড়েনি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী জুনে এলসি ও ডলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

উপদেষ্টা বলেন, আগামী বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই, তবে এ লক্ষ্যে কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর জোরারোপ করেন, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কর প্রদানের মানসিকতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সালমান এফ রহমান বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ন্যায় কৃষি, চামড়া, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে যথাযথ আর্থিক ও নীতি সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।   

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আগামী বাজাটে মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় রাখা, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস প্রভৃতি বিষয়গুলোর ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণয়নের সুযোগ নেই, তবে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়টিকে সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), এমপি বলেন, দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় আরও বৃদ্ধি করা জরুরি। তিনি বলেন, জিপিডিতে করের অবদান বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই, তবে এ লক্ষ্যে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আরও মনোযোগী হতে হবে। এছাড়াও তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দ্রুততম সময়ে সকল সেবা চালুকরণের আহ্বান জানান, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে তরান্বিত করবে।    

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাজেট প্রণয়নে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, এলডিসি উত্তরণ, স্থানীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন, রফতানি বহুমুখীকরণ প্রভৃতি বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের বেসরকারি খাতের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে এবং বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। কারণ এর সাথে উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারালে সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ উন্নয়নে তিনি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানোর ওপর জোরারোপ করেন। পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকে শিল্পের উন্নয়নে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।  

আলোচকরা দেশের কর ও শুল্ক ব্যবস্থার অটোমেশন, আধুনিকায়ন ও সংস্কার, করজাল বৃদ্ধি, রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন, টেকসই পুঁজিবাজার নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় সম্পদের কার্যকর ব্যবহার বাড়ানো, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্পোরেট কর হার কমানো, রফতানির সম্ভাবনাময় খাতে বন্ড সুবিধা প্রদান ও পণ্যের বহুমুখীকরণ, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যক্রম সম্পন্নকরণ, পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষর প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করেন।       

আলোচনা সভায় ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।