চার দফা দাবিতে ঈদের দিন অনশন করবেন রানা প্লাজার শ্রমিকরা

চার দফা দাবিতে ঈদের দিন অনশন করবেন রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা। রবিবার (১৬ এপ্রিল) রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক গোল টেবিল বৈঠকে এ কথা জানান রানা প্লাজা সারভাইভ্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এই ট্র্যাজেডিতে আহত মাহমুদুল হাসান হৃদয়। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের আয়োজন করে রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলন।

মাহমুদুল হাসান হৃদয় বলেন, ‘রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাবন করছে। অনেকে বিনাচিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছে। কিন্তু রাষ্ট্র ও সরকার তাদের জন্য এগিয়ে আসেনি। তাই রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূর্তিতে আমরা চার দফা দাবিতে ঈদের দিন অনশন কর্মসূচি করবো। ওই দিন সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।’

তাদের দাবি হলো– রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসন ব্যবস্থা করা; রানা প্লাজা ঘটনার জন্য দায়ী সবার বিচারের ব্যবস্থা করা; দেশের শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিক বান্ধব আইন গড়ে তোলা; দেশের সব শিল্প খাতে আহত শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করা।

বৈঠকে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির আহত শ্রমিক ইয়ানুর বলেন ‘আমার ছোট একটা জীবনে না পেলাম সুখ, না পেলাম শান্তি। না হলো আমার জীবনের কোনও নিশ্চয়তা। আমার কোনও ভবিষ্যৎ নাই, আমি বেঁচে থেকে কি করবো? যখন সন্তানের মুখে খাবার দিতে পারবো না তখন আমার বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়া সমান কথা।’

তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজায় চাকরি করার সময় আমার বয়স ছিল ১৩ বছর। আমার মাও একই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। তিনি সেদিন মারা গিয়েছেন। আমার ছোট ছয় ভাই-বোন আছে। এখন তারা বড় হয়েছে। তাদের এখন বিভিন্ন এতিমখানায় দেওয়া হয়েছে। আমার বাবা বৃদ্ধ মানুষ। তার বয়স ৬০ বছর। তিনি কোনও কাজ করতে পারেন না।’

রানা প্লাজার ঘটনায় দুটি পা হারিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। দিন আনি দিন খাই। তার কাজ না থাকলে আমাদের খাওয়া বন্ধ। আমি কোনও কাজ করতে পারি না। এই সমাজ এখন আমাদের বোঝার চোখে দেখে। আমি ও আমার মতো যারা আছে তারা যেন খেয়েপরে বাঁচতে পারি সেই ব্যবস্থাটা করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

বৈঠকে আরও ছিলেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলনের সমন্বয়ক শাহ আলম হোসেনসহ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।