চট্টগ্রামে বিনোদনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড়

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাসিন্দা দুবাইপ্রবাসী শরীফুল আলম (৪৮)। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে দেশে এসেছেন। সে জন্য রবিবার (২৩ এপ্রিল) স্ত্রী-সন্তাদের নিয়ে ঘুরতে যান দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত পতেঙ্গা সি-বিচে।

রবিবার ছিল ঈদের দ্বিতীয় দিন। ঈদকে ঘিরে সকাল থেকে লোকে লোকারণ্য ছিল পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকা। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ছিল তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।

এদিকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের মতো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেকে এমিউজমেন্ট পার্ক এবং সি ওয়ার্ল্ডসহ সব কটি বিনোদনকেন্দ্র ছিল দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর।

সরেজমিনে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে আসা দর্শনার্থীদের কেউ কেউ সমুদ্রের পানিতে গা ভেজানো, স্পিডবোটে সমুদ্রে ঘোরা এবং সমুদ্রে পাশ ঘেঁষে হাঁটতে দেখা গেছে। এ ছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের তীরে দর্শনার্থীদের বসার স্থান রয়েছে। যেখানে একসঙ্গে কয়েক হাজার দর্শনার্থী বসে সমুদ্র উপভোগ করেছে।

প্রবাসী শরীফুল আলম বলেন, রমজানের শুরুতে দুবাই থেকে দেশে বেড়াতে এসেছি। লক্ষ্য এবার ঈদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে করবো। প্রথম দিন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়েছি। আজ দ্বিতীয় দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সি-বিচে ঘুরতে এসেছি।

 

পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. ইসরাফলি মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদের দিন বিকালে অন্তত ৫০ হাজারের মতো দর্শনার্থী পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে এসেছিল। তবে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিবারের সঙ্গে আসা তিনটি বাচ্চা হারিয়ে গিয়েছিল। পরে তাদের আমাদের জিম্মায় নিয়ে অভিভাবকদের খোঁজ করে হস্তান্তর করা হয়।

 

তিনি আরও বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিনে আরও বেশি দর্শনার্থী এসেছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে সাদাপোশাকধারী ট্যুরিস্ট পুলিশের গোয়েন্দা টিম, সার্বক্ষণিক মাঠে আছে টহল টিম, আছে ক্যুইক রেসপন্স টিম। যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় শনিবার ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রথম দিন ১৩ হাজার দর্শনাথী প্রবেশ করেছে চিড়িয়াখানায়। রবিবার সকাল থেকে দলে দলে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক পরিচালিত এ চিড়িয়াখানায় ৭৩ প্রজাতির ৬২০টি পশু-পাখি রয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নতুন প্রজাতির পশু-পাখি, যা শিশু-কিশোর, বয়স্কদের নজর কাড়ে।

চিড়িয়াখানার চিকিৎসক ও ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের দিন ১৩ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন (রবিবার) সকালে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসছে। প্রথম দিনের চেয়ে রবিবার বেশি দর্শনার্থী প্রবেশ করবে বলে আশা করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এখানে শুধু শিশুরাই যে এসেছে তা নয়, কিশোর, যুবক ও বয়স্করাও চিড়িয়াখানায় এসেছে। চলতি বছর চিড়িয়াখানায় যুক্ত হয়েছে এক জোড়া সিংহ, চার জোড়া ওয়াইল্ড বিস্ট, ম্যাকাও, ক্যাঙ্গারু ও লামা। এসব প্রাণী দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে।’

তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় পুরো চিড়িয়াখানা জুড়ে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। শিশুদের জন্য চিড়িয়াখানায় পৃথক একটি কিডস জোন রয়েছে, যেখানে দোলনাসহ বিভিন্ন রাইড রয়েছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পাশেই রয়েছে নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র রেলওয়ের কৃত্রিম জলাশয় ফয়’স লেকে গড়ে তোলা এমিউজমেন্ট পার্ক এবং সি ওয়ার্ল্ড। এখানেও এবার বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটেছে।

চট্টগ্রামে বিনোদনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড়

পার্ক পরিচালনাকারী কোম্পানি কনকর্ডের উপব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আজ (রবিবার) ঈদের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে এমিউজমেন্ট পার্ক ও সি ওয়াল্ডে অনেক দর্শনার্থী এসেছে। দিন শেষে বলা যাবে কত দর্শনার্থী এসেছে। প্রথম দিনে দুই হাজার দর্শনার্থী এখানে প্রবেশ করেছে। আমাদের সব রাইডগুলো সচল রয়েছে। আছে এখানে তাঁবু টাঙিয়ে রাতযাপনের ব্যবস্থাও।

এদিকে নগরীর ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়ক মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ১৯৪ একর খাস জমি দখলমুক্ত করে গড়ে তোলা ফ্লাওয়ার পার্কটি দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে সবার। যেখানে শোভা পাচ্ছে শতাধিক রকমের ফুল। এ ছাড়া নগরের পতেঙ্গা এলাকায় অবস্থিত প্রজাপতি পার্ক, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন নেভাল, কর্ণফুলী নদীর অভয় মিত্র ঘাট, কাজির দেউড়ি শিশু পার্ক, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা পার্ক, আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশু পার্ক, আগ্রাবাদ জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর ও হালিশহর সাগর পাড়ে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটেছে।

নগরীর বাইরেও জেলার ১৫টি উপজেলার একাধিক বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীরা ভিড় করেছে। যার মধ্যে রয়েছে সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সাগরপাড়, চন্দ্রনাথ পাহাড়, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, আনোয়ারায় পারকি সমুদ্রসৈকত, রাউজানে মহামুনি মন্দির, অণিরুদ্ধ বড়ুয়া অনি শিশু পার্ক, বেতাগি কর্ণফুলী নদীর পাড়, রাউজান রাবার বাগান, ফটিকছড়ি চা বাগানেও ভিড় জমেছে দর্শনার্থীদের।