IPL 2023 Exclusive: MS Dhoni Wins Heart In Eden Gardens, Crowd Worship The Legendary Cricketer


সন্দীপ সরকার, কলকাতা: তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করলেন।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (MS Dhoni)। ক্রিকেট মাঠে তাঁর রেকর্ড ঈর্ষণীয়। কিন্তু ব্যক্তি ধোনি, তিনিও কি ঈর্ষার পাত্র নন?

গৌতম গম্ভীরের কথা মনে করুন। দুবারের আইপিএল (IPL 2023) জয়ী অধিনায়ক। মাঠে নেমে প্রথমেই দৌড়তেন পিচ দেখতে। কিউরেটরের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করতেন, বাইশ গজ কীরকম আচরণ করতে পারে।

বা ধরুন রাহুল দ্রাবিড়। অধিনায়ক থাকাকালীন তো বটেই, এমনকী ভারতীয় দলের কোচ হিসাবেও একটা কাজ নিয়ম মেনে করতেন। করেন। ম্যাচের আগের দিন সন্ধ্যেবেলা বিমানবন্দরে নামলেও সটান হাজির হয়ে যান মাঠে। উইকেট দেখে যান। যাতে সেই মুহূর্ত থেকে ম্যাচের কৌশল সাজানো শুরু করে দিতে পারেন মনে মনে। এমনও নজির রয়েছে যে, ম্যাচের দিন সকালে নিঃশব্দে মাঠে এসে পি

দেখে গিয়েছেন দ্রাবিড়।

রোহিত শর্মা তো পিচের ওপর এতক্ষণ সময় কাটান যে, কিউরেটরের সঙ্গে খটাখটিও লেগেছে।

গম্ভীর, দ্রাবিড়, রোহিতরা এক গ্রহ হলে, ধোনিকে মনে হবে এলিয়েন। ভিন গ্রহের বাসিন্দা। কেন? শুক্রবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলে শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতা পৌঁছেছেন ধোনি। সতীর্থদের সঙ্গে। সেদিন আর মাঠমুখো হননি। ইডেন উইকেটের খোঁজ খবর নিতে সিএবি-র কারও কাছে ফোন এসেছিল বলেও খবর নেই। বিমানবন্দর থেকে সটান হোটেলে যান।

রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে ম্যাচ। সাতটায় টস। কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবির সাড়ে পাঁচটায় ইডেনে পৌঁছে গেল। সেখানে সিএসকে ঢুকল প্রায় সোয়া ছ’টায়। টিমবাস থেকে ধোনি নামামাত্র যে শব্দব্রহ্ম তৈরি হল, যে কোনও প্রতিপক্ষ কেঁপে যেতে পারে। কিন্তু ড্রেসিংরুম থেকে ধোনি বেরবেন কখন? সিএসকে ক্রিকেটারেরা ওয়ার্ম আপ শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু ধোনির মাঠে নামার চিহ্নই নেই।

যখন ড্রেসিংরুম থেকে বেরলেন, ঘড়িতে ৬.৪০। কিন্তু এ কী! ধোনি নেমে উইকেটের দিকে গেলেনই না। সতীর্থদের সঙ্গে হাল্কা স্ট্রেচিং। ওয়ার্ম আপ। তারপরই ড্রেসিংরুমে ফিরলেন। টিম জার্সি পরে নেমে পড়লেন টস করতে। পিচ নিয়ে মাথা ঘামাতে তাঁর বয়েই গিয়েছে। অধিনায়ক ধোনির জগৎ অনেক সহজ-সরল। তাঁর ক্রিকেটীয় দর্শনই হল, একই পিচে তো দুই দলকেই খেলতে হবে। অতিরিক্ত ভেবে কী লাভ?

কী করে এত শান্ত, সংযত, নির্লিপ্ত থাকতে পারেন মাহি? যে কোনও অধিনায়ক তো আপনাকে হিংসে করবেই।

ধোনি যে এমনি এমনি ক্যাপ্টেন কুল হননি, প্রতি পদক্ষেপে তার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি নিজে একচল্লিশ। সঙ্গে মঈন আলি, রবীন্দ্র জাডেজার মতো এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। অনেকে মজা করে বলতেন, এ তো ড্যাডিস আর্মি! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তাজা রক্তের খেলা। এরা করবে কী?

ধোনি তাঁদের নিয়ে ২ বছর আগে চেন্নাই সুপার কিংসকে চতুর্থ খেতাব দিয়েছেন।

চলতি আইপিএলের আগে তুষার দেশপাণ্ডেকে কজন চিনতেন? বা মাথিশা পাথিরানা? অবিকল লাসিথ মালিঙ্গার মতো বোলিং অ্যাকশন বলে যাঁকে বেবি মালিঙ্গা বলা হচ্ছে। ধোনির হাতে পড়ে প্রত্যেকে যেন চাবুক। ঠিক যেমন অজিঙ্ক রাহানে। যাঁকে বলা হতো, টেস্ট ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টিতে অচল। কেকেআর তাঁকে গত মরসুমের পর ছেড়ে দিয়েছিল। ধোনি তুলে এনেছিলেন মিনি অকশন থেকে। রাহানের মধ্যে এমন আত্মবিশ্বাসের বারুদ ভরে দিয়েছেন যে, ইডেনে ২৯ বলে অপরাজিত ৭১ রানের বিস্ফোরণ ঘটল। তাও পুরনো দল কেকেআরের বিরুদ্ধেই।

ধোনি এমনই। গোটা বিশ্ব যাঁর ওপর ভরসা করার আগে দ্বিধায় ভোগে, ধোনি তাঁকেই কোচোয়ান করে রথ ছোটান। নিজে আত্মবিশ্বাসের এভারেস্ট। চারপাশের সকলকেও নিঃস্বার্থে মনের জোর বিলিয়ে যান। সে নিজের দলের পাথিরানা-দেশপাণ্ডে-রুতুরাজ গায়কোয়াড় হোক, বা প্রতিপক্ষের উমরন মালিক-অভিষেক শর্মা।

শনিবারের ইডেনও ধোনিকে প্রাপ্য ভালবাসা দিল। গ্যালারিতে হলুদের প্লাবন। মুখে ধোনি ধোনি স্লোগান। ভালবাসার ডাক। শ্রদ্ধার নিবেদন। সম্মান প্রদর্শনের শব্দব্রহ্ম। কেউ এসেছেন মোবাইল ফোন বিক্রি করে সেই টাকায় টিকিট কেটে। কেউ শারীরিক অসুস্থতা উপেক্ষা করে। কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, ‘ধোনি, আমার জীবন নিয়ে নাও, আরও একশো আইপিএল ম্যাচ খেলো,’ তো কারও আর্তি, ‘ক্যামেরাম্যান, প্লিজ আজ গ্যালারির কোনও সুন্দরী নন, সারাক্ষণ ফোকাস করুন ধোনির দিকেই’।

আর বরাবরের নির্লিপ্ত ধোনি, তিনি নিজেও কি এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে আবেগাপ্লুত হলেন না? পেশাদার ধোনি, আপনার কি সত্যিই মন নেই?

আছে। আছে বলেই শৈশবের বন্ধুদের প্রতিষ্ঠিত করতে লড়াই চালান। আছে বলেই হেলিকপ্টার শটের জনক, বাল্যবন্ধু সন্তোষ মৃতপ্রায় শুনে এয়ারলিফট করিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আছে বলেই ভক্ত রাম বাবু বাংলাদেশে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শুনে নিজে বিমানের টিকিট কেটে দেশে ফেরত পাঠান। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ কাঁধে তুলে নেন।

রবিবারের ইডেন যে কেকেআরের খেলা দেখতে নয়, কানায় কানায় ভরে উঠেছে তাঁর উপাসনায়, তাঁর সমর্থনে, বুঝেছিলেন ধোনি। তাই রবীন্দ্র জাডেজা আউট হওয়ার পর যখন ডিআরএস নিলেন, আর ব্যাট-প্যাড পরে তৈরি হচ্ছিলেন মঈন আলি, গ্যালারি গর্জন করে উঠল, উই ওয়ান্ট ধোনি, উই ওয়ান্ট ধোনি…। তৃতীয় আম্পায়ার জাডেজাকে আউট দিতেই ধোনি, যিনি ডাগ আউটে ব্যাট হাতে বসেছিলেন, উঠে দাঁড়ালেন। হেঁটে গেলেন ক্রিজের দিকে। হোক না মাত্র ২ বল। প্রায় ৭০ হাজার দর্শকের মনস্কামনা তো পূর্ণ হবে।

এরকম পরিস্থিতিতে একশোবারের মধ্যে ৯৯ বার ধোনি নির্লিপ্ত থাকেন। আবেগে ভেসে যান না। কিন্তু রবিবারের ধোনি ভালবাসার, সমর্থনের কিছুটা অন্তত ফিরিয়ে দিলেন। সতীর্থ মঈনের পরিবর্তে নিজে নামলেন। উই ওয়ান্ট সিক্স আব্দার হয়তো মেটাতে পারেননি। মাহি মার রহা হ্যায়-এর সুযোগও ছিল না। কিন্তু হতাশও করেননি। ২ রানে অপরাজিত রইলেন। সেই হরিণের মতো দুই উইকেটের মাঝে দৌড়।

গোটা ইডেন মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে বরণ করল মহানায়ককে। সেই আলোর ছটায় কৃত্রিম লেজার শো-ও যেন ফিকে। ফিল্ডিংয়ের সময় প্রত্যেকটি বল আটকেছেন, গ্যালারি চিৎকার করে কুর্ণিশ জানিয়েছে। হয়তো শেষবারের মতো বাইশ গজে ধোনি-দর্শন হল ইডেন জনতার। যে নিঃশর্ত সমর্থনের জন্য ইডেন জনতাকে সেলাম করলেন মাহিও। মাঠকর্মীদের সঙ্গে ছবি তুললেন। গ্যালারির দিকে হাত নাড়লেন। বরাবরের মতো মাথা আকাশে। পা মাটিতে।

কিংবদন্তি ধোনি। ইডেনের জয়োধ্বনি আপনার প্রাপ্য।