পেঁয়াজের মজুত পর্যাপ্ত, দাম বাড়ার কারণ জানেন না ব্যবসায়ী নেতারা

দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ক্রেতারা। তবে দাম বাড়ার কারণ জানেন না খোদ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।

বুধবার (৮ মে) দুপুরে খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রাকে ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে পেঁয়াজ। দিনে ২৫-৩০ ট্রাক ঢুকছে খাতুনগঞ্জের আড়তে। প্রতি ট্রাকে ১৫ টন ধারণক্ষমতা। প্রতি আড়তে পর্যাপ্ত মজুত আছে।

ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, প্রায় দুই মাস ধরে দেশের সবগুলো স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদার জোগান দিতে হচ্ছে। জোগান কমে আসার শঙ্কায় দাম বেড়েছে। এখন খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা।

নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে খুচরায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা। বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, ‘৫৫ টাকা কিনে ৬০ টাকা বিক্রি করছি। আমাদের লাভ সীমিত।’

গত মাসের শেষের দিকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানালেন খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আড়তে ৫০-৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। 

আড়তে পর্যাপ্ত মজুত আছে, সরবরাহে ঘাটতি নেই উল্লেখ করে আবুল কাসেম বলেন, ‘প্রতিদিন ২২৫-৩০০ টন পেঁয়াজ আড়তে আসছে। আগেও এই পরিমাণ আসতো। পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ আসছে। প্রতি আড়তে পর্যাপ্ত মজুত আছে। তবু কেন দাম বেড়েছে সে কারণ আমার জানা নেই।’

আমদানি বন্ধ থাকার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা এমনটি জানিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির এই নেতা আরও বলেন, ‘খোঁজ দেখেছি যেসব জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে সেখানে যে পরিমাণ মজুত আছে, তা দিয়ে আরও তিন-চার মাস দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে আমদানি শুরু হলে দাম কমে যাবে।’

দেশি পেঁয়াজে খাতুনগঞ্জের সব আড়ত ভরপুর বলে জানালেন আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত জোগান থাকা সত্ত্বেও ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে। শুধু পেঁয়াজ নয়; আদা, রসুন ও জিরাসহ অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তবে দাম বাড়ার কারণ আমার জানা নেই।’

গত মাসের শেষের দিক থেকে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক নাছির উদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। সেইসঙ্গে অন্যান্য বন্দর দিয়েও আমদানি বন্ধ। এভাবে দাম বাড়তি থাকলে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি মিলতে পারে।’

বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন এমনটি জানিয়েছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, ‘এখন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা। রোজার ঈদের আগেও ৩০-৩৫ টাকায় কিনেছি। প্রতি বছর কোরবানির ঈদ এলে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও জিরাসহ মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বাজার মনিটরিং না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিচ্ছেন।’