৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর দুঃখপ্রকাশ করলেন এএসপি-ওসি

নোয়াখালীর হাতিয়ায় চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর দুঃখপ্রকাশ করে জনরোষ থেকে রক্ষা পেয়েছেন রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী ও রামগতি থানার ওসি আলমগীর হোসেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রামগতির উদ্দেশে রওনা হন এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাতিয়া উপজেলার হরনি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পে তাদের অবরুদ্ধ করেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে তাদের অবরুদ্ধ করা হলেও ভিন্ন কথা বলেছেন সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম।

অবরুদ্ধ হওয়ার পর উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টির সমাধান করেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বিজয়া সেন। রাত সাড়ে ১১টার এই তথ্য নিশ্চিত করেন বিজয়া সেন নিজেই।

তিনি বলেন, দুই পুলিশ কর্মকর্তা অবরুদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে আমরা টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পে যাই। স্থানীয় মেম্বারের সঙ্গে একটা বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। পরে ভুল স্বীকার করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার। বিষয়টি নিয়ে আমি বিক্ষুব্ধ লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবি ছিল, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের পাশাপাশি নোয়াখালীর পুলিশ ওই ক্যাম্পে থাকতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি তাৎক্ষণিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়দের দাবিকৃত নোয়াখালীর ১০ জন পুলিশ সদস্যকে ওই ক্যাম্পে সংযুক্ত করেছি। যার মধ্যে একজন ইন্সপেক্টর, একজন উপপরিদর্শক, একজন সহকারী উপপরিদর্শক ও সাত জন কনস্টেবল রয়েছেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকালে এএসপি সাইফুল আলম এবং ওসি আলমগীর হোসেন টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পে আসেন। তারা পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ক্যাম্পের গোল ঘরে বসেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে আসেন স্থানীয় ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. বাবুল হোসেন সুজন ও টাংকির বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন। পরে পুলিশ গোল ঘর থেকে তাদের চলে যেতে বলে। বিষয়টি নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ক্যাম্প ঘেরাও করেন স্থানীয় লোকজন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হাজারো লোকজন একত্রিত হয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তবে ইউপি সদস্যের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন রামগতি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, টাংকির বাজার ক্যাম্পের পাশে নোয়াখালী অঞ্চলের আরও একটি আরআরএফ (রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স) ক্যাম্প রয়েছে। আমরা ক্যাম্পের গোল ঘরে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সদের নিয়ে মিটিংয়ে বসার কিছুক্ষণ পর একজন লোক ক্যাম্পে ঢুকে আমাদের সঙ্গে বসে পড়েন। আমি পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে মাইন উদ্দিন মেম্বার বলে পরিচয় দেন। তখন মেম্বারকে পরে আসার জন্য বললে চলে যান। কিছুক্ষণ পর নিজের অনুসারীদের নিয়ে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যান। একই সঙ্গে স্থানীয় লোকজনকে বিক্ষুব্ধ করে হাজার খানেক লোক নিয়ে ক্যাম্পে আমাদের ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এ অবস্থায় দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া উপায় ছিল না।

তিনি বলেন, রামগতি ও হাতিয়ার সীমানা নিয়ে বিরোধ আছে। টাংকির বাজার ক্যাম্পটি লক্ষ্মীপুরের অধীনে থাকায় মাঝেমধ্যে অভিযানে গেলে সেখানে যেতাম। সেখানে আমাদের দেখে বিক্ষুব্ধ হন জনপ্রতিনিধিরা। এজন্য আজকের ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা।

তবে নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘টাংকির বাজার পুলিশ ক্যাম্পটি রেঞ্জের অধীনে। ওই ক্যাম্প কখনও রামগতি বা লক্ষ্মীপুরের অধীনে ছিল না। এটা নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা ছিল। আজকের পর থেকে ওই এলাকায় রামগতি পুলিশের কার্যক্রম থাকবে না, সেখানে নোয়াখালীর ফোর্স যুক্ত করা হয়েছে।’