ঘূর্ণিঝড় মোখার খবরে শঙ্কিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপটির ১৭ হাজার মানুষ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। প্রাকৃতিক এই দুযোগ মোকাবিলায় সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো নোয়াখালীর হাতিয়ায়ও নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। তবে এই উপজেলার মূল ভূখণ্ডে ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও এখনও অরক্ষিত রয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরগাসিয়া।

বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা এ দ্বীপ রক্ষায় নেই কোনও বেড়িবাঁধ। নেই সাইক্লোন শেল্টার সেন্টারও। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এখানে ১৭ হাজার মানুষের বসবাস। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় বাসিন্দাদের, ঘটে প্রাণহানিও। এত কিছুর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র খবর শুনে শঙ্কিত এখানকার মানুষ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই যুগ আগে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা ১২ কিলোমিটারের দ্বীপটিতে ২০১৩ সালে জনবসতি শুরু হয়। বর্তমানে সাত সমাজে বিভক্ত আট হাজার পরিবারের প্রায় ১৭ হাজার মানুষ এখানে বসবাস করছেন। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ও পরে কোনও ধরনের সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই মোকাবিলা করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজে ঢোকে পানি।

দ্বীপের বাসিন্দা নুর আলম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে নিজেদেরকেই লড়াই করতে হয়। এখানে কোনও রাস্তাঘাট, বেড়িবাঁধ ও সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার নেই। দুর্যোগে নদীর জোয়ারে সবার ঘরে পানি ওঠে। এখানকার মানুষের নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার কোনও জায়গা নেই। আমরা ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়েও আতঙ্কে আছি। ভয়ে বুক কাঁপছে। ঘূর্ণিঝড় তীব্র হলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছি না।

ঘূর্ণিঝড় মোখার খবরে শঙ্কিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপটির ১৭ হাজার মানুষ

আরেক বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম বলেন, সামান্য জোয়ারেই পানি উঠে যায়। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। হাতিয়ার ইউএনও এ সপ্তাহে এখানে এসেছেন। তিনি আমাদের দুর্দশার চিত্র দেখে গেছেন। আশা করি, সরকার এবার আমাদের দিকে নজর দেবে। দ্বীপের চারদিকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে আমরা দুর্যোগ থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাবো।

ঘূর্ণিঝড় মোখার খবরে শঙ্কিত বিচ্ছিন্ন দ্বীপটির ১৭ হাজার মানুষ

ইউএনও কায়সার খসরু বলেন, এই দ্বীপের মানুষ বিচ্ছিন্ন। আমি চলতি সপ্তাহে পরিদর্শন করেছি। সেখানে নৌবাহিনীর কিছু নতুন ব্যারাক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঘূর্ণিঝড় মোখায় জরুরি প্রয়োজনে তারা সেগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবে। আমরা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। তাদের মাধ্যমে চরগাসিয়াসহ বিচ্ছিন্ন সব দ্বীপেও ঘূর্ণিঝড়ের সব বুলেটিন মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।