রাজধানীতে লক্কড়-ঝক্কড় যান, দেখেও ‘ব্যবস্থা নিতে পারে না’ পুলিশ

দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ বাহিনী। আইনি যেকোনও সমস্যা, সংকট বা বিপদে নাগরিকদের প্রথম ভরসা বাংলাদেশ পুলিশ। নাগরিকদের নিরাপত্তায় শহর থেকে গ্রামে সবখানে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন পুলিশ সদস্যরা। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, পুলিশ আছে জনতার পাশে’ এই স্লোগান নিয়ে নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে বাহিনীটি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশে সৃষ্টি করা হয়েছে নানা ধরনের ইউনিট। তবে যানবাহন, স্বাস্থ্য, জনবল ও লজিস্টিকসহ নানা সংকটে জর্জরিত বিশাল এই বাহিনী। সেসব সংকট নিয়েই বাংলা ট্রিবিউনের সিরিজ প্রতিবেদন ‘পুলিশের কষ্ট’।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০ লাখ যানবাহন চলাচল করছে। তবে ফিটনেস সার্টিফিকেট না থাকা, রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ পার হয়ে যাওয়া, বাহ্যিক দিক থেকে দেখতে লক্কড়-ঝক্কড়—এমন গণপরিবহনও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নানা অনিয়মের কারণে ট্রাফিক বিভাগ বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও ডাম্পিং স্বল্পতার কারণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। যে কারণে শুধু মামলা দিয়েই ক্ষান্ত থাকতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। মামলা দেওয়ার পর সেসব গাড়ি আবারও রাজধানী দাপিয়ে বেড়ায়। এসব কারণে সড়কে ফিরছে না শৃঙ্খলা, ঘটেই চলছে নানান দুর্ঘটনা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যখন বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে, সেগুলোর তদন্তে দেখা যায়— বেশিরভাগ গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকে না, থাকে না রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদও। এমনকি যে যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, সেই যানবাহনের চালকেরও অনেক সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে না। রাজধানীতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই অনেক চালক বিভিন্নভাবে ‘ম্যানেজ’ করে যানবাহন চালিয়ে আসছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে মামলা দেওয়া হলেও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চালকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গণপরিবহনের চালকরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকার কারণে ট্রিপ অনুযায়ী তাদের মজুরি হয়। যে যত বেশি ট্রিপ দিতে পারবেন, তার ইনকাম তত বেশি। সে কারণে চালকরা অনেক সময় বেপরোয়া হয়ে গাড়ি যান। এছাড়া তারা যাত্রী ওঠা-নামানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘ সময় গাড়ি থামিয়ে রাখেন। চালক এবং হেলপারের নির্ধারিত টার্গেট পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বাসগুলো বিভিন্ন স্টপেজ থেকে ছাড়ে না।

ট্রাফিক বিভাগের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ফিটনেস-বিহীন বাস ট্রাফিক পুলিশের জন্য বড় একটি কনসার্ন। কারণ, ফিটনেস-বিহীন যানবাহন যখন রাস্তায় চলে তখন শুধু চালক নন— আরোহী, পথচারী এবং আশেপাশে যারা থাকেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। তবে ফিটনেস-বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে, কিংবা এ ধরনের গাড়ি আটক করে ডাম্পিং এ পাঠানো হচ্ছে।

রাজধানীতে লক্কর-ঝক্কর গাড়ি (ফাইল ছবি)

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে সড়কে শৃঙ্খলা অনেকটাই ফিরে এসেছে। কিন্তু এ বিষয়ে আরও তদারকি ও নজরদারির মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেমন সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেই সঙ্গে গাড়ির চালক ও মালিকেরও মাইন্ড সেটের বিষয় রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে ডাম্পিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ট্রাফিক পুলিশ অনেকটা বাধ্য হয়ে সব ফিটনেস-বিহীন গাড়ি জব্দ করতে পারছে না। শুধু মামলা দেওয়া হচ্ছে। পরে জরিমানা শোধ করে গাড়িগুলো আবারও সড়কে নামে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।’