রাজশাহীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, ছাড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রা

রাজশাহী অঞ্চলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬৫ হাজার ৩০০ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর। 

চাষিরা জানিয়েছেন, জেলার সব উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই ধান পেকে জমিতে দুলছে। উৎসাহ নিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলতে মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে ধান বিক্রি করতে এনেছেন অনেক চাষি। গোদাগাড়ী উপজেলার রাজবাড়ী হাট ও পবা উপজেলার দামকুড়া নওহাটা হাটে ২৮ ধান সাড়ে ১২০০ টাকা মণ এবং জিরা সাইল ১৩০০ টাকা বিক্রি করছেন তারা।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের (রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ) চার জেলায় ৩ লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। বাজারে মণ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে সাড়ে ১২০০ টাকা। 

অপরদিকে, সরাসরি কৃষকদের কাছে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। লটারির মাধ্যমে বাছাই করা হয়েছে কৃষক। কৃষকরা সরকারি খাদ্যগুদামে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১২০০ টাকায়।

এ বছর ১৭ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি জানিয়ে গোদাগাড়ীর রাজবাড়ী ব্লকের বিজয়নগর এলাকার আরিফ হোসেন বলেন, ‘বিঘাপ্রতি ফলন পেয়েছি ২০ মণ। খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় দাম ভালো পাওয়ায় লাভ হবে।’

আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের কৃষক সিহাব উদ্দিন বলেন, ‘ধান কাটতে শুরু করেছি। সব জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় শ্রমিকের মজুরি বেশি। তাই ছেলেদের নিয়ে ধান কাটছি। না পারলে শ্রমিক নেবো। এবার ভালো ফলনে আমি অনেক খুশি।’

কৃষকরা ধানের দাম ভালো পাচ্ছেন উল্লেখ করে পবা উপজেলার বড়গাছী এলাকার কৃষক সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ফলন ভালো, দামও বেশি পাচ্ছি।
গত দুই-তিন বছর দাম ভালো না পাওয়ায় চাষ কমিয়ে দিয়েছি। তবে এভাবে যদি দাম ভালো পাই, আবাদ বাড়িয়ে দেবো।’ 

পবার দর্শনপাড়া এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি মণ বাজারে ১২০০ টাকায় বিক্রি করছি।’

বাজারে মণ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে সাড়ে ১২০০ টাকা

এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। বাম্পার ফলন হওয়ায় আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হবে।’

গতবারের চেয়ে এ বছর কৃষকরা দাম ভালো পাচ্ছেন জানিয়ে মোজদার হোসেন বলেন, ‘বাজারে প্রতি মণ ধান ১২০০ থেকে সাড়ে ১২০০ টাকা এবং সরকারের কাছে ১২০০ টাকা বিক্রি করছেন কৃষকরা।’

ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনছে সরকার এমনটি জানিয়ে নওহাটা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর প্রতি কেজি ২৭ টাকা দরে মণ এক হাজার ৮০ টাকা কেনা হয়েছিল। এ বছর কৃষকরা সরকারি খাদ্যগুদামে প্রতি মণ বিক্রি করছেন ১২০০ টাকায়। এখন বাজারে বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু মজুত অনেক কম। গোডাউনের তুলনায় বাজারে দাম কিছুটা বেশি হলেও মজুত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে পারে। কিন্তু খাদ্যগুদামে দাম অপরিবর্তিত থাকবে।’