UP Minority Voting Pattern: উত্তরপ্রদেশে বদলে গিয়েছে সংখ্যালঘুদের ‘ভোটিং প্যাটার্ন’, দাবি বিশ্লেষকদের

উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের ‘ভোটিং প্যাটার্নে’ বদল এসেছে সদ্য সমাপ্ত পুরভোটে। এমনই দাবি বিভিন্ন বিশ্লেষকের। সাধারণত উত্তরপ্রদেশের মুসলিমরা সংঘবদ্ধ ভাবে যেকোনও একটি দলকে সমর্থন করে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই দলটি সমাজবাদী পার্টি। তবে এবারের পুরভোটে দেখা গেল অন্য এক ‘ট্রেন্ড’। এই বিষয়ে সেন্টার ফর অবজেকটিভ রিসার্চ অ্যান্ড জেভেলপমেন্টের ডিরেক্টর আতহর হুসেন হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘আমার মনে হয় মুসলিমরা এবার পরীক্ষা করে দেখতে চাইছিলেন। তারা রীতি ভেঙে ভোটিং প্যাটার্ন বদলেছেন। কারণ তাদের সেই রীতি তাদের কোনও কাজেই আসছিল না।’

এই ভোটিং প্যাটার্ন বদলের ফলেই উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় এনডিএ প্রথম মুসলিম বিধায়ক পেল। বিজেপি সমর্থিত আপনা দলের শফিক আহমেদ আনসারি সুয়ার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে হারান সমাজবাদী পার্টির অনুরাধা চৌহানকে। উল্লেখ্য, এই আসনে বিধায়ক ছিলেন আজম খানের ছেলে আব্দুল্লা। বাবা-ছেলে দু’জনেই প্রচারে নেমেছিলেন। তবে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ হতেই এই আসনে উপনির্বাচন হয়। এবং সেই নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি সংখ্যালঘুদের সংঘবদ্ধ ‘আশীর্বাদ’ পায়নি এবং তাই ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে এখানে জয়ী এনডিএ-র মুসলিম প্রার্থী। এদিকে মিরাটে মেয়র নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীকে সমর্থনের বদলে অধিকাংশ সংখ্যালঘু ভোটার এআইএমআইএম প্রার্থীকে সমর্থন জানান। এক সময় তিনি এই নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত এই ভোটে তিনি দ্বিতীয় স্থানে থাকেন। তবে এখানেও দেখা গিয়েছে, সমাজবাদী পার্টির থেকে মুখ ফিরিয়েছেন সংখ্যালঘুরা।

এদিকে সাহারানপুরেও সমাজবাদী পার্টির আশু মালিককে ‘প্রত্যাখ্যান’ করেন সংখ্যালঘুরা। এর বদলে বিএসপি প্রার্থীর প্রতি তারা বেশি ভরসা দেখান। যদিও এখানে মেয়র নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় বিজেপি। এদিকে মোরাদাবাদ, ঝাঁসি ও অযোধ্যায় সমাজবাদী পার্টির বদলে কংগ্রেসের মেয়র পদপ্রার্থীকে বেশি সমর্থন দেন সেখানকার সংখ্যালঘুরা। কানপুরে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগি হয়ে যায় কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টির মধ্যে। সাইকেল বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কানপুরে কংগ্রেস তাদের ভোট ব্যাঙ্গে ভাগ বসানোয় নিশ্চিত ভাবে চিন্তিত হবেন অখিলেশ যাদব। এই নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর তারিক রাজা ফাতিমি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর মুসলিমরা ব্যক্তিগত ভাবে ভেবেচিন্তে ভোট দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশে। এবারে স্থানীয় ইস্যুতে ভোট দিয়েছেন তারা। ৯০-এর দশক থেকে এমনটা দেখা যায়নি।’

উল্লেখ্য, পুরভোটে ১৭টি পুরনিগমের মেয়দ পদে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। এদিকে কর্পোরেটর নির্বাচনে (ওয়ার্ড ভিত্তিক পুরনির্বাচনে) ১৪২০টির মধ্যে ৮১৩টি ওয়ার্ডে জয়ী বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি জয়ী ১৯১টি, বিএসপি জয়ী ৮৫টি এবং কংগ্রেস জয়ী ৭৭টিতে। তাছাড়া পুরপরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনেও এগিয়ে বিজেপি। ১৯৯টি পরিষদের মধ্যে ৮৯টিতে বিজেপি প্রার্থী জয়ী, সমাজবাদী পার্টির ৩৫ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী। কংগ্রেস ৪ এবং বিএসপি ১৬টি পরিষদে চেয়ারম্যান পেয়েছে। বাকি ৪১টি পুরপরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জিতেছেন নির্দলরা।

এদিকে পুরপরিষদের সদস্যদের ভোটে মোট ৫৩২৭টি ওয়ার্ডে ভোট হয়। এর মধ্যে বিজেপি জয়ী ১৩৬০টি ওয়ার্ডে, নির্দলরা জয়ী ৩১৩০টি ওয়ার্ডে, সমাজবাদী পার্টি এগিয়ে ৪২৫টি ওয়ার্ডে, বিএসপি ১৯১টি, কংগ্রেস জয়ী ৯১টিতে জয়ী। অপরদিকে নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান নির্বাচনেও বিজেপির জয়জয়কার বজায় রয়েছে। মোট ৫৪৪টি পদের জন্য ভোটগ্রহণ হয়েছে। বিজেপি প্রার্থীরা এর মধ্যে জয়ী ১৯১টিতে। সমাজবাদী পার্টি জয়ী ৭৮টিতে এবং বিএসপি জয়ী ৩৭টিতে। কংগ্রেস জয়ী ১৪টিতে। মোট ৭১৭৭টি নগর পঞ্চায়েত ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে বিজেপি জিতেছে ১৪০৩টি ওয়ার্ডে, নির্দলরা জয়ী ৪৮২৪টি ওয়ার্ডে, সমাজবাদী পার্টি জয়ী ৪৮৫টি, বিএসপি জয়ী ২১৫টিতে এবং কংগ্রেস জিতেছে ৭৭টি ওয়ার্ডে।