ফরাসি উপকূলীয় শহরে চমকে দিলেন নোয়াখালীর নাজমা

ঘড়ি ধরা চার ঘণ্টা বাকি ৭৬তম কান উৎসবের পর্দা ওঠার। মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুর ৩টা (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা)। কানের পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের সামনে রাজ্যের ভিড়। মাথার ওপর তপ্ত রোদ। এমন আবহাওয়া গত কয়েকদিন সাগরপাড়ের শহরটিতে খুব একটা মেলেনি। কারণ এখানে এই মিষ্টি রোদ, এই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, সেই সঙ্গে শীতল হাওয়া। অথচ আজ সবাইকে মুগ্ধ করে সকাল থেকেই হাসছে ঝকঝকে রোদ। উৎসবের জন্য আসা শিল্পী-কুশলী-সাংবাদিকদের একটাই লক্ষ্য- গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের প্রশস্ত সিঁড়িতে বিছানো লালগালিচার সামনে ছবি তোলা। সেদিকেই ব্যস্ত বেশিরভাগ মানুষ।

কান উৎসবের নিয়মিত এই দৃশ্য ছাপিয়ে নজর কাড়লেন নোয়াখালীর এক তরুণী। তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে পিচঢালা সড়কে বসে পড়েছেন তিনি। ঠিক গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের লালগালিচাকে সামনে রেখে। শুধু বসে নেই, কোলের ওপর রঙতুলি রেখে আপন মনে ক্যানভাসে ছবি আঁকছে মেয়েটি। যে ছবিতে তিনি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন সামনের লালগালিচাকে ঘিরে উৎসুক মানুষের আগ্রহের প্রতিচ্ছবি।

হ্যালো বলে ডাকতেই তাকালেন এই শিল্পী। তার আগেই অনুমান ছিল, তিনি সম্ভবত প্যারিসেরই কোনও উদীয়মান চিত্রশিল্পী। কারণ দেশটা তো ছবি ও কবিতার! সেটা একেবারেই ভুল প্রমাণিত হলো আলাপে। তিনি জানালেন, লন্ডন থেকে কানসৈকতে এসেছেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে নাজমা বললেন, ‘দেখুন ঘরে বসেও কিন্তু এই ফেস্টিভ্যালের ছবি ও ভিডিও দেখা যায়। কিন্তু আমি চেয়েছি, সরাসরি দেখে আমার ক্যানভাসে তুলে ধরতে। সেজন্য বেছে নিয়েছি উৎসবের মূল ফটক।’

নাম জানতে চাইলে তিনি জানান, নাজমা হক। এরপর তিনি বলেন, ‘ইউ ফ্রম বাংলাদেশ?’ উত্তর হ্যাঁ-সূচক পেয়ে নাজমা যেন একটু আন্তরিক হলেন। ভাঙা কণ্ঠে উচ্ছ্বসিত চোখে জানালেন, তিনিও একই দেশের মেয়ে। প্রশ্ন ছিল, বাংলায় বলতে পারেন? উত্তরটা ছিল বেশ মজার, ‘না! আমি নোয়াখালীর ভাষায় বলতে পারি!’

কারণ নাজমা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মেয়ে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত দুইবার নোয়াখালী গিয়েছিলেন। সামনে আবারও যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তার কথায়, ‘গোটা পৃথিবীর মধ্যে নোয়াখালী সেরা জায়গা।’

কান শহরের পিচঢালা সড়কে বসেই ছবি আঁকছেন নাজমা হক (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

নাজমা জানান, ২০ মে পর্যন্ত কান উৎসবে থাকবেন তিনি। শুরুটা করলেন লালগালিচার ফটক থেকে। এরপর রোজ তিনি উৎসবের বিভিন্ন অংশ ছবিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন। তারপর ফিরে যাবেন লন্ডনে। শুধু উৎসবই নয়, প্যারিসের বিভিন্ন স্থানে ছবি এঁকেছেন এভাবেই বসে বসে।

বাংলাদেশের মানুষের জন্য কোনও বার্তা আছে কিনা জানতে চাইলে নাজমা অনুপ্রেরণা জোগালেন, ‘তুমি নারী হও আর পুরুষ, সমস্যা নেই। আমি বলবো, তোমরা স্বপ্ন দেখতে শেখো। সেই স্বপ্নটাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হাঁটো। সফল হবেই।’

কান উৎসবের বাণিজ্যিক বিভাগ মার্শে দ্যু ফিল্ম (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

বলা দরকার, আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় পর্দা উঠছে ৭৬তম কান উৎসবের পর্দা।

এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পেয়েছেন অভিনেত্রী কিয়ারা মাস্ত্রোইয়ান্নি। তিনি গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরের মঞ্চে স্বাগত জানাবেন জুরি সভাপতি রুবেন অস্টলান্ডসহ অন্য বিচারকদের। তারা হলেন ‘ক্যাপ্টেন মারভেল’ তারকা ব্রি লারসন, আমেরিকান অভিনেতা পল ড্যানো, মরোক্কান পরিচালক মরিয়ম টুজানি, ফরাসি অভিনেতা দঁনি মিনোশেঁ, জাম্বিয়ান-ওয়েলশ পরিচালক-চিত্রনাট্যকার রুঙ্গানো নিয়োনি, আফগান কথাসাহিত্যিক-নাট্যকার আতিক রহিমি, আর্জেন্টাইন পরিচালক দামিয়ান সিফ্রন এবং স্বর্ণপামজয়ী ফরাসি পরিচালক জুলিয়া দুকুরনো।

উদ্বোধনী আসরে দুইবারের অস্কারজয়ী অভিনেতা মাইকেল ডগলাসকে দেওয়া হচ্ছে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সম্মানসূচক স্বর্ণপাম। আর উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে দেখানো হবে হলিউড সুপারস্টার জনি ডেপ অভিনীত ‘জান দ্যু ব্যারি’। প্রাক্তন স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ডের বিপক্ষে মানহানি মামলার আইনি লড়াইয়ে জয়ের পর এটাই হতে যাচ্ছে ৫৯ বছর বয়সী এই অভিনেতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি।

এবার উৎসবটির সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপামের জন্য মূল প্রতিযোগিতা শাখায় লড়বে ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও ১টি প্রামাণ্যচিত্র। আঁ সেঁর্তা রিগা শাখায় ২০টি, প্রতিযোগিতার বাইরে ৬টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও ১টি টিভি সিরিজ, মিডনাইট সেশনসে ৫টি, কান প্রিমিয়ারে ৭টি এবং স্পেশাল সেশনস শাখায় রাখা হয়েছে ৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, ২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও ৩টি প্রামাণ্যচিত্র।  

এছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মূল প্রতিযোগিতায় ১১টি এবং শিক্ষার্থী পরিচালকদের বিভাগ লা সিনেফে রয়েছে ১৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। কানের আরও দুই বিভাগ সিনেমা দ্যু লা প্লাজ এবং কান ক্ল্যাসিকসের অফিসিয়াল সিলেকশনেও থাকছে কয়েকটি ছবি।

১২ দিনব্যাপী কান উৎসবের পর্দা নামবে আগামী ২৭ মে। সমাপনী চলচ্চিত্র হিসেবে দেখানো হবে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওর ২৭তম সিনেমা ‘এলেমেন্টাল’।