দীর্ঘ টালবাহানা, আলোচনার পর অবশেষে চূড়ান্ত হল কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর নাম। ১৩৫টি আসনে জিতে কর্ণাটকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেও দুই হেভিওয়েট নেতার ‘আকাঙ্খার’ জেরে অস্বস্তিতে পড়েছিল হাত শিবির। কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমার এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এই আবহে দিল্লিতে থেকে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন হাইকমান্ডের সঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে অবশেষে সিদ্দারামাইয়াকেই ‘আপাতত’ মুখ্যমন্ত্রী করছে কংগ্রেস। সূত্রের খবর, গত রবিবার গোপন ব্যালটে বিধায়কদের থেকে যে মত নেওয়া হয়েছিল, তাতে এগিয়ে ছিলেন সিদ্দারামাইয়া। আর তার ভিত্তিতেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেই ফের একবার গদিতে বসাচ্ছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। এদিকে আজকেই কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। তবে তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে, আগামী ২০ মে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন সিদ্দারামাইয়া। এদিকে সেদিন তাঁর ডেপুটি হেসেব শপথ নেবেন শিবকুমার।
জনা গিয়েছে, গতকাল গভীর রাতে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রিত্বের ‘ফর্মুলা’ চূড়ান্ত করতে পেরেছেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। বিগত তিনদিন ধরে সিদ্দারামাইয়া দিল্লিতে ছিলেন। শিবকুমার রাজধানীতে ছিলেন গত ২ দিন ধরে। মল্লিকার্জুন খাড়গে ছাড়াও এই দুই নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। এদিকে কর্ণাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিং সুরজেওয়ালাও এই দুই নেতার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। খাড়গের সঙ্গেও বৈঠক করেন সুরজেওয়ালা। সূত্রের খবর, দুই নেতাকেই ‘আড়াই বছরের’ ফর্মুলাতে রাজি করানো হয়েছে। অর্থাৎ, কংগ্রেস সরকারের মেয়াদের প্রথম আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন সিদ্দারামাইয়া, আগামী আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসবেন শিবকুমার। এর আগে ডিকে শিবকুমার জোর গলায় দাবি জানিয়ে এসেছিলেন যে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে, না হলে তিনি কোনও পদই গ্রহণ করবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে ‘আড়াই বছরের ফর্মুলায়’ রাজি করানো গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে রাজস্থান, পঞ্জাব, ছত্তিশগড়ে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। দাবি করা হয়, ছত্তিশগড়েও ভূপেশ বাঘেল এবং টিএস সিং দেও-কে ‘আড়াই বছরের ফর্মুলা’য় রাজি করানো হয়েছিল আগেরবার। তবে শেষ পর্যন্ত টিএস সিং দেও-কে আর মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি। এই নিয়ে দিল্লিতে বহুবার বৈঠক করেছিলেন টিএস সিং দেও। তবে ভূপেশ বাঘেল শেষ পর্যন্ত নিজের গদি ধরে রেখেছিলেন। এদিকে ভোটমুখী রাজস্থানে অশোক গেহলট বনাম সচিন পাইলটের লড়াই এখনও জারি রয়েছে। এছাড়া পঞ্জাব এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সরকার হারাতে হয়েছে কংগ্রেসকে। পঞ্জাবে দল ছন্নছাড়া হয়ে পড়ায় ভোটে ভরাডুবি হয়। আর মধ্যপ্রদেশে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে মাঝপথেই কংগ্রেস সরকার পড়ে যায়। এবার কর্ণাটকেও একই পরিস্থিতি হয় কিনা, সেদিকে নজর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।