এক মঞ্চে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ছাত্র সমাজ

গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়াতে ‘রাজনৈতিক আলাপ চলবে’ এই প্রতিপাদ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘তারুণ্যের মেলা’। দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও জাতীয় ছাত্র সমাজের সদস্য ছাড়াও এতে অংশগ্রহণ করেন চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১৯ মে) সকাল ১০টায় রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে শুরু হয় এই মেলা। ইউএসএআইডির অর্থায়নে মাল্টি-পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত মেলা চলে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।

সেখানে অংশ নেন ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, তিতুমীর কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী। এর মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল এবং জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ- এই তিনটি সংগঠনের ৭৫ তরুণ নেতা এবং ৭৫ জন সাধারণ শিক্ষার্থী।

প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল থেকেই অংশ নেন কেন্দ্রীয় নেতারা। রাজনীতিবিমুখ তরুণদের আকৃষ্ট করতে দলগুলোকে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, জাতির পিতা সবসময় তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হলো তরুণরা। এরপরের ধাপ হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মতাদর্শের অমিল থাকলেও দেশের স্বার্থে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে সবাইকে এক থাকতে হবে। তরুণদের জন্য আমরা আজ তিনটি দলের নেতারা এক মঞ্চে একত্রিত হয়েছি- এটাই হলো গণতন্ত্র প্রক্রিয়া।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা বিভিন্ন সময় তরুণদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করি, তারুণ্যের শক্তিকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি না বলেই তারা কিছুটা রাজনীতিবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির ভালো ও খারাপ দিক আছে। শুধু খারাপ দিক নিয়ে কথা বললে সামনের দিকে এগোতে পারবো না। এ সময় তিনি তরুণদের প্রতি বলেন ‘আই হেট পলিটিক্স’ বলবেন না।

জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহম্মদ রাজু বলেন, সবার আগে দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। তা না হলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে কীভাবে? এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র নেতৃত্ব বিকাশে দ্রুত ছাত্র সংসদের নির্বাচন দেওয়ারও দাবি জানান তিনি। 

অনুষ্ঠানে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ড্যানা এল. ওলডস্ আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রোগ্রাম একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো যে- ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শ হলেও এভাবে সহবস্থান সম্ভব। রাজনীতিতে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করা মানে হলো ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারকদের প্রতি বিনিয়োগ করা। রাজনীতিকদের এই সহবস্থান দেখে তরুণরা জানবে কীভাবে সহনশীলতা চর্চা করা যায়।

অনুষ্ঠান শেষে কুইজ শো, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়৷ এ ছাড়া ৮টি কোর্স সফলভাবে সম্পন্নকারী গ্রাজুয়েটরাও মেলা থেকে সনদ গ্রহণ করেন।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম ঢাকার সভাপতি ও বিএনপির ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ, ফোরামের সহ-সভাপতি ও জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খান জুয়েল। সঞ্চালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপকমিটির সহকারী সম্পাদক নুরজাহান আকতার সবুজ এবং ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নাদিয়া পাঠান পাপন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি লেসলি রিচার্ড।