WB HS result 2023: ছেলের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে সফল, বেশি নম্বর পেয়ে আক্ষেপ মায়ের

ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোর থাকলে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। তা আরও একবার দেখিয়ে দিলেন নদিয়ার বছর ৪০-এর লতিকা মণ্ডল। ছেলের সঙ্গেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলেন। শুধু তাই নয়, ছেলের থেকে একটু বেশি নম্বরও পেলেন। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হওয়ার পরেই নজর কেড়েছেন নদিয়ার এই মা ও ছেলে। এবার ছেলে সৌরভ মণ্ডলের সঙ্গেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন লতিকা। তিনি শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুর নতুন সরদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। উচ্চ মাধ্যমিকে মায়ের প্রাপ্ত নম্বর ৩২৪ এবং ছেলের প্রাপ্য নম্বর ২৮৪। তবে উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করলেও ছেলের থেকে ৪০ নম্বর বেশি নম্বর পাওয়ায় অবশ্য লতিকার গলায় আক্ষেপের সুর। তিনি বলেন, ‘ছেলে যদি আমার থেকে বেশি নম্বর পেত তাহলে ভালো হত।’

লতিকার দুই মেয়ে এবং ছেলে। তাঁর এক মেয়ে কলেজ ছাত্রী। লতিকা মণ্ডলের বর্তমান বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। ছোট থেকেই তাঁর আশা ছিল কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। আর্থিক অনটন এবং পারিবারিক সমস্যার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে তারপর পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এরপরে হাজারো চেষ্টার পরেও তিনি পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। দেখাশোনা করেই প্রায় ১৯ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল লতিকার। বড় মেয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার পরেই লতিকার নতুন করে পড়াশোনা করার ইচ্ছে হয়। এরপরে এক প্রতিবেশীর সাহায্যে তিনি রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকে ভর্তি হন। ঠিক সেই সময় তার ছেলে সৌরভ মণ্ডল মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। দুজনেই একসঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়ে লতিকা ভর্তি হন নৃসিংহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। ছেলে সৌরভ মণ্ডলও তখন কালনা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। মা ও ছেলে একই ক্লাসে থাকায় ছেলের সঙ্গেই বাড়িতে পড়াশোনা করতে বসতেন লতিকা।

এর জন্য প্রতিবেশীদের বিভিন্ন কটুক্তি সহ্য করতে হয়েছে লতিকাকে। কিন্তু, তারপরেও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। গতকাল উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর পর তারা জানতে পারেন দুজনেই পাশ করেছেন। তবে মা লতিকা মণ্ডল ছেলের থেকে ৪০ নম্বর বেশি পেয়েছেন। এ বিষয়ে লতিকা বলেন, ‘আমি ছেলের মুখ থেকে জানতে পারি যে আমরা দুজনেই পাশ করেছি। তবে আমি ৩২৪ নম্বর পেয়েছি। আর ছেলে ২৮৪ পেয়েছে। আমি যে ৪০ নম্বর বেশি পেয়েছি সেটা ছেলে বেশি পেলেই হয়তো ভালো হত এবং আমি খুশি হতাম।’ আগামী দিনে আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান বলেই দাবি করেছেন লতিকা। তবে নিজে কম নম্বর পেয়েও মায়ের সাফল্যে যথেষ্ট খুশি সৌরভ। তিনি বলেন, ‘মা এত ভালো ফলাফল করেছে এতে আমি মোটেও দুঃখিত নই। আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে আগামী দিনে আরও উচ্চশিক্ষিত হতে চাই।’

এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup