Census in India: NPR, NRC, জনগণনা… লোকসভা ভোটের আগে আদমশুমারি নিয়ে কী ভাবছে সরকার?

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র ভারত। জনসংখ্যার নিরিখেও ‘হয়ত’ শীর্ষে বসেছে আমাদের দেশ। তবে রাষ্ট্রসংঘের সেই দাবির ওপর এখনও সরকারি সিলমোহর পড়েনি। চিন, আমেরিকায় হলেও চলতি দশকে এখনও জনগণনা হয়নি ভারতে। গত ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড অতিমারির জন্য সেই প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। তারপরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে দেশের জনগণনা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছে। এর সঙ্গে যেমন রাজনীতি জড়িয়ে রয়েছে, তেমনই জড়িয়ে রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা। এবং পিটিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এবছরও ভারতের জনগণনা সম্ভব হবে না।

শেষবার দেশে জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। কোভিডের জেরে ২০২১ সালে জনগণনা প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছিল। মনে করা হচ্ছিল ২০২৩ সালে জনগণনা হতে পারে দেশে। তবে রিপোর্ট বলছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে হয়ত ভারতের জনগণনা প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। প্রসঙ্গত, আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরপর নয়া সরকার গঠিত হলেই শুরু হতে পারে জনগণনা প্রক্রিয়া। উল্লেখ্য, এর আগে জনগণনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার’ বা এনিপিআর-কে জুড়ে দিতে চাইছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনপিআর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় নির্ধারণ করেছিল কেন্দ্র। তবে এনপিআর নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। সিএএ বিরোধিতায় ওঠা রবের সঙ্গে জুড়েছিল ‘নো এনপিআর’ স্লোগান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় মিছিল করে জানিয়েছিলেন রাজ্যে এনপিআর হতে দেবেন না তিনি। বিরোধী দলগুলির দাবি, এনপিআর আদতে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসি-র প্রথম ধাপ। এই আবহে লোকসভা নির্বাচনের আগে জনগণনাও হচ্ছে না। আর তার সঙ্গে বিরোধীদের হাতে এনপিআর নামক হাতিয়ারও তুলে দিতে চাইছে না বিজেপি।

এদিকে জনগণনা না হওয়ার পিছনে রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতাও। উল্লেখ্য, সেনসাস দফতরের তরফে জেলা এবং উপজেলার প্রশাসনিক সীমানা ‘ফ্রিজ’ করার ঘোষণা করা হয়েছিল গত জানুয়ারিতে। এই প্রক্রিয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে তখন ৩০ জুন করা হয়েছিল। এই প্রশাসনিক সীমানা ফ্রিজ করার প্রক্রিয়ার তিন মাস পর থেকেই জনগণনা প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। অর্থাৎ, ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে দেশে জনগণনা প্রক্রিয়া শুরুও হতে পারবে না। এদিকে যে সরকারি কর্মী এবং শিক্ষকরা এই জনগণনা প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতেও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। তবে অক্টোবরের পর থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশন আগামী লোকসভা ভোটের তোরজোড় শুরু করে দেবে। এবং যে সরকারি কর্মী এবং শিক্ষকদের জনগণনা প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার কথা, তাঁরাই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হবেন। তাই ভোটের আগে জনগণনা হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই প্রায় নেই। কারণ স্বভাবতই ২০২৩ সালের শেষ লগ্ন থেকেই লোকসভা ভোটই অগ্রাধিকার পাবে প্রশানিক মহলে।

এদিকে জানা গিয়েছে, পরবর্তী জনগণনায় মোট ৩১টি প্রশ্ন থাকবে। এবারের জনগণনার প্রশ্নমালার ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। এদিকে এই প্রথম দেশে ডিজিটাল জনগণনা হতে চলেছে। এই প্রক্রিয়ায় কোনও ব্যক্তি বাড়িতে বসেই প্রশ্নমালার জবাব দিয়ে নিজেই অংশ নিতে পারেন জনগণনা প্রক্রিয়ায়। তাঁর বাড়িতে যাবেন না কোনও সরকারি কর্মী। তবে ডিজিটাল উপায়ে এই প্রক্রিয়ার অংশ নিতে হলে এনপিআর-এ অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক। তবে তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ এনপিআর-এর জন্য পোর্টাল চালুর দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে প্রশ্নমালার মাধ্যমে জনসাধারণকে জিজ্ঞেস করা হবে যে তাঁদের কাছে গাড়ি বা বাইক রয়েছে কি না। বাসস্থান এবং শৌচালয় ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন করা হবে। তাছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ, মোবাইল আছে কি না, তাও জানতে চাওয়া হবে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রধান খাদ্য কী, সেই প্রশ্নও থাকবে প্রশ্নমালায়। তবে কতকটা বিতর্ক তৈরি হতে পারে ধর্মী বিশ্বাস সংক্রান্ত প্রশ্নে। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো বেশ কিছু রাজ্যে আদিবাসীরা প্রকৃতি পুজো করেন। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস হিন্দু বা অন্য ধর্মের থেকে আলাদা। তবে জানা গিয়েছে, জনগণনায় ধর্মী বিশ্বাস সংক্রান্ত প্রশ্নে বেছে নেওয়ার জন্য শুধুমাত্র ছ’টি ধর্মের নামই দেওয়া হয়েছে। ভিন্ন সম্প্রদায় বেছে নেওয়ার কোনও বিকল্প সেখানে নেই। আদিবাসীদের মন জয় করতে দ্রৌপদী মুর্মুকে বিজেপি রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে ঠিকই। তবে আদিবাসীদের অনেক দাবি সরকার সেভাবে মেনে নেয়নি। আমাদের রাজ্যের কুড়মি আন্দোলন তার একটি বড় উদাহরণ। এই আবহে জনগণনা শুরু করে আদিবাসীদ সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্ম সংক্রান্ত সেই বিতর্কে জড়াতে চাইবে না বিজেপি।