Modi Govt on Schemes: লাভবান হবেন কয়েক কোটি মানুষ, লোকসভা ভোটের অঙ্ক কষে বড় সিদ্ধান্ত মোদী সরকারের

প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছবে ১০০% মানুষের কাছে, ভোটের আগে নাগরিক সেবাই হাতিয়ার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। লোকসভা নির্বাচনের বাকি আর এক বছর। তাই শাসক, বিরোধী, দুই পক্ষই কোমর কষে প্রস্তুতি শুরু করতে চলেছে। ভোটারদের মন জয় করার জন্য বিরোধীরা যেমন প্রতিশ্রুতির ডালা সাজিয়ে পরিবেশন করবেন, সেখানে সরকার নিজের জনমুখী প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইবে। এই আবহে সম্প্রতি একটি বৈঠক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এবং সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা ১০০ শতাংশ সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে। জানা গিয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের সেই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক বা দফতরের আমলা, আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার মতো একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে ভোটারদের মনে জায়গা করে নিতে চাইছে বিজেপি। সম্প্রতি এনডিএ সরকারের নয় বছর পূর্তি হয়েছে। আর এরই মধ্যে আগামী বছরের লোকসভার রূপরেখা তৈরি করছে গেরুয়া শিবির। আর এর জন্যই সরকারের এই প্রকল্পগুলিকে হাতিয়ার করতে চাইছে সরকার। শীঘ্রই পিএম কিষাণ প্রকল্পের অধীনে কৃষকদের ১৪তম কিস্তির টাকা পাঠানো হবে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে যেসকল কৃষকের ই-কেওয়াইসি হয়নি, তাদের অ্যাকাউন্টে এই কিস্তির টাকা ঢুকবে না বলে জানা যাচ্ছে। তবে ই-কেওয়াইসি না করা কৃষকদের সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করানোর জন্য উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে। এদিকে গত ২০১৬ সালে শুরু হওয়া উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে ১৭ কোটি গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সেই সংখ্যা আরও বাড়ানোর দিকে নজর রয়েছে মোদী সরকারের। দেশের মহিলা ভোটারদের মন জয় করতে বিগত কয়েক বছরে উজ্জলা যোজনা ছাড়াও সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও, বিনামূল্যে সেলাই মেশিন বিতরণের মতো প্রকল্প বাস্তবায়িত করেছে কেন্দ্র।

ভারতীয় রাজনীতিতে একটি বহুলপ্রচলিত প্রবাদ হল, ‘লোকসভা ভোটে দিল্লির পথ যায় উত্তরপ্রদেশ হয়ে’। লোকসভা আসনের নিরিখে দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। বর্তমানে এই রাজ্য থেকে লোকসভায় ৮০ জন নির্বাচিত প্রতিনিধিকে পাঠান ভোটাররা। তাই উত্তরপ্রদেশের ওপর বিশেষ নজর রয়েছে বিজেপির। এই রাজ্যে এমনিতেই গেরুয়া শিরিবই ক্ষমতায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের ৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। হকারদের জন্য কেন্দ্রের স্বনিধি প্রকল্পের আওতায় এই রাজ্যের ১১ লাখ ৯৪ হাজার জন হকার লাভবান হয়েছেন। এর থেকেই বোঝা যায়, যে বিজেপি নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদের মনে জায়গা করে নিতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পকেই হাতিয়ার করেছে।

এদিকে এই সবের মাঝে দেশ জুড়ে সরকারের সুনাম ছড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পকে। কোভিড পরবর্তী সময়ে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার মূল্য বুঝেছেন সাধারণ মানুষ। এই আবহে আয়ুষ্মান ভারতের মাধ্যমে ন্যায্য দামে ওষুধ বিক্রি করা হয়। তাছাড়া সর্বশেষ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৫ কোটি ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৩২৮ জন আয়ুষ্মান কার্ড ব্যবহার করে হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন এবং চিকিৎসা করিয়েছেন। এদিকে কেন্দ্রের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবার কাগজের আয়ুষ্মান কার্ডের বদলে পিভিসি কার্ড দেওয়া হবে সুবিধাভোগীদের। যাদের এর আগে কাগজের কার্ড দেওয়া হয়েছে, তাদেরও নতুন করে পিভিসি কার্ড দেওয়া হবে। এদিকে এর আগে কাগজের আয়ুষ্মান কার্ডের জন্য ৩০ টাকা করে দিতে হত সুবিধাভোগীদের। তবে নতুন পিভিসি কার্ডের জন্য কোনও সুবিধাভোগীকেই কোনও টাকা দিতে হবে না। এই পিভিসি কার্ডটির কার্যকারিতা অবশ্য ভোটারদের মনে ছাপ ফেলার ক্ষেত্রে উপযোগী হবে বলে মত অনেক বিশ্লেষকের।

এদিকে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের মতো বড় এবং ভোটমুখী রাজ্যে আয়ুষ্মান ভারতের সুযোগ সুবিধা সব গরিম মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছে কেন্দ্র। এবং এই কাজ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে চায় সরকার। এই রাজ্যগুলিতে যেসব পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসার যোগ্য, তাদের ১০০ শতাংশের কাছেই এই প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দিতে প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এরই সঙ্গে রাজ্য সরকারকেও হাত লাগাতে বলা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী আরোগ্য যোজনার আওতায় রয়েছে ভারতের ১০ কোটি ৭৪ লাখ পরিবার। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সেই সংখ্যাটা ১২ কোটিতে নিয়ে যেতে চাইছে সরকার। অর্থাৎ নতুন করে ১ কোটি ২৬ লাখ পরিবারের ৬ কোটি মানুষের কাছে আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর সরকার। এদিকে বিগত কয়েক দিনে বিজেপি নেতা মন্ত্রীরা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ সুবিধার প্রশংসা করেছেন জনসমক্ষে। সরকারের ‘রিপোর্ট কার্ড’ পেশ করে সরকরের সাফল্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তারা। প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল, পীযূষ গোয়াল, মনসুখ মাণ্ডব্যরা বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে মুখ খুলেছেন গত কয়েকদিনের মধ্যেই।