সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিয়ো দেখে ৭ বছর পর মাকে খুঁজে পেলেন ছেলে

বছর সাতেক আগে স্বামীর অত্যাচারে অভিমানে ঘর ছেড়েছিলেন। তারপর আর ঘরে ফেরেননি। তাঁর ঠাঁই মহানগরের রাজপথে। সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টের দৌলতে ৭ বছর পর সেই মহিলাকে ফিরে পেলেন তাঁর ছেলে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই পোস্টের নেপথ্যে এক পুলিশ কর্মী। ওই পুলিশ কর্মীর সামনে মহিলা মন্তব্য করেছিলেন, ‘পলিটিক্যাল প্রোগ্রামের খাবার নেব না।’ কেন? সেই উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘ইম্পসিবল, অসম্ভব।’ ফুটপাতবাসী মহিলার সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিয়ো দেখেই মাকে খুঁজে পেলেন ছেলে।

আরও পড়ুন: ‘পৃথিবী একজন মাকে হারাল’, প্রিয়জনকে হারালেন শিলাজিৎ, কার জন্য এমন বার্তা লিখলেন

ওই মহিলার নাম ঝর্না যাদব। তিনি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাসিন্দা। স্বামীর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিন মেয়ে এবং দুই ছেলেকে রেখেই তিনি ঘর ছেড়েছিলেন। সেই সময় তাঁর ছেলে, মেয়ে সকলেই ছিল ছোট। ফলে মা কেন ঘর ছেড়েছিল তা সেই সময় তারা বুঝতে পারেনি। ঘর ছেড়ে রায়গঞ্জ থেকে মহিলা চলে আসেন আসেন কলকাতায়। ৩ বছর তিনি বরাহনগরের টবিন রোডের ফুটপাতে ছিলেন তিনি। পরে তিনি ডানলপের ফুটপাতে থাকতে শুরু করেন। সেখানে কাগজ, বোতল কুড়িয়ে এবং চায়ের দোকানে কাজ করে দিন চলত তাঁর। একমাস আগে ফুটপাতবাসী ওই মহিলাকে একটি পলিটিক্যাল প্রোগ্রামের খাবার দিতে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মী তথা সংসদ সৌগত রায়ের দেহরক্ষী বাবন দাস। কিন্তু, সেই খাবার নিতে অস্বীকার করেন ঝর্না দেবী। তিনি জানিয়ে দেন, ‘পলিটিক্যাল প্রোগ্রামের খাবার নেব না।’ কেন নেবেন না? সেই প্রশ্ন করলে তার উত্তরে তিনি জানিয়ে দেন, ‘ইম্পসিবল, অসম্ভব।’ একজন ফুটপাতবাসীর মুখে ইংরেজি কথা শুনে কার্যত বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন বাবন দাস। সেই কথার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে পরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। ভিডিয়োটি ভাইরাল হতেই সেটি ঝর্না দেবীর ছেলে নেহালের চোখে পড়ে। এরপর নেহাল বাবন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর মায়ের সম্পর্কে জানতে পারে। মঙ্গলবার ডানলপে মাকে নিতে আসেন তাঁর ছেলে নেহাল। তাঁর কথায়, ‘বাবন দা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলেন। সেই ভিডিয়ো আমি দেখতে পেয়ে বাবন দার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন বাপন দা বলেন আমার মা ভালো আছে। এক জায়গায় থাকে। তোমারা নিয়ে যেতে চাইলে আসতে পারো। সেই কথা শুনে আমি মাকে নিতে যাই।’ মায়ের ঘর ছাড়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘ তখন ছোট ছিলাম বুঝতে পারিনি। পরে বুঝেছি মা কেন বাড়ি ছেড়েছিলেন। মাকে কোনওদিন ফিরে পাব ভাবতেই পারিনি।’

এদিন প্রথমে ছেলেকে দেখে লাঠি উচিয়ে মারতে যান ঝর্না দেবী। পরে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ছেলেকে তিনি বলেন, ‘এতদিনে মায়ের কথা মনে পড়ল!’ ঝর্না দেবী বলেন, ‘আমি ঘর ছাড়লেও স্বামীর অপেক্ষায় ছিলাম। ভেবেছিলাম আমাকে হয়ত ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আমি স্বামীর পথে চলেছি। আমার তিন মেয়ে এবং দুই ছেলে আছে। ছেলে নিতে এসেছে আমি খুব খুশি হয়েছি।’ স্থানীয়দের বক্তব্য, ‘ঝর্না দেবী সকলকে নিজের ছেলে মেয়ের কথা বলতেন। উনি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন না।’ বাবন দাস বলেন, ‘মহিলার ইংরেজি কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। তারপরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছিলাম। ২০ লক্ষ ভিউ হয়েছে। তবে আমার পোস্ট যে এভাবে মা ও ছেলেকে মিলিয়ে দেবে তা ভাবতে পারিনি। আমার খুব ভালো লাগছে।’