চাপের আনাগোনায় রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচ জয়ে রাঙালো বাংলাদেশ  

বাংলাদেশের বোলাররা দাপট দেখায় শুরুতে। শেষটা তাদের ছিল না। তাতে আফগানিস্তান চাপে ফেলে তাদের। এরপর ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানের স্পিন জাদু কতটা সামলাতে পারে বাংলাদেশ! বেশ কঠিন ছিল সময়টা। টপ অর্ডারদের ব্যর্থতার পর শামীম হোসেন ও তৌহিদ হৃদয় সেই চাপ সামলে নিয়ে ম্যাচ বের করে নেয় স্বাগতিকরা। আফগানিস্তানও হাল ছাড়ার নয়। শেষ ওভারে তারা ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে বসেছিল। এভাবেই চাপ একবার সরে গেছে, তো আবার চেপে বসেছে। চাপের আনাগোনা সামলে নিয়ে সিলেটের দর্শকদের ঠিক আনন্দে ভাসিয়েছে বাংলাদেশ, জিতেছে ২ উইকেটে।

শুরুটা ছিল বাংলাদেশের। টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে আফগানিস্তানকে চেপে ধরেছিল তারা। হঠাৎ করে ছন্দপতন। মোহাম্মদ নবী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিলেন। ডেথ ওভারে দুজনের দাপুটে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বোলাররা হতাশায় নিমজ্জিত। 

শেষ চার ওভারে ৫৩ রান যোগ হলো, তাতে ওমরজাই ৩৩ রান করলেন ১৮ বল খেলে। আর নবী শেষ ওভারে ফিফটি হাঁকিয়ে অপরাজিত ছিলেন ৫৪ রান করে। 

১৪তম ওভারে ৪ উইকেটে ৮৭ রান করা দলটি শেষ করলো ৭ উইকেটে ১৫৪ রানে। অপ্রত্যাশিতভাবে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের এই দাপট বাংলাদেশকে বিস্মিত করেছিল।

চ্যালেঞ্জিং স্কোর তাড়া করতে নেমে যেমন শুরু দরকার ছিল, তেমনটা হয়নি। রনি তালুকদার (৪)ক্রিজে ছিলেন অল্প কিছু সময়। নাজমুল হোসেন শান্ত ছয় মেরে প্রতিপক্ষের হাততালি কুড়ালেন। আনন্দচিত্ত ব্যাটিংয়ে সিলেট দর্শকদের মাতাতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বোল্ডে আফসোস নিয়ে মাঠ ছাড়েন শান্ত (১৪)। মুজিব উর রহমানের বল তার হাতে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে।

লিটন দাস নিজেকে মেলে ধরতে গিয়ে থিতু হতে পারেননি। শর্ট বল খেলতে গিয়ে সোজা রশিদ খানকে ক্যাচ দেন লিটন (১৮)।

১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৪ রান বাংলাদেশের। বৃষ্টির পর সাকিব আল হাসানের ছোট্ট ঝড়ে ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। কিন্তু তিনিও থামলেন ১১তম ওভারে। আর কোনও রান যোগ না করে সাকিবের বিদায় মাত্র ১৯ রান করে, তিন চার ছিল ইনিংসে।

৬৪ রানে নেই চার উইকেট। চাপ চেপে বসেছিল বাংলাদেশের ঘাড়ে। শামীম হোসেনকে পেতেই তৌহিদ হৃদয় বদলে গেলেন। দুজনের ব্যাটে ধীরে ধীরে বাংলাদেশকে আশা জাগানো অবস্থানে নিলেন।

একসময় সহজ হয়ে গেলো ম্যাচ, জ্বলজ্বলে হলো জয়ের স্বপ্ন। ১৮ বলে ১৯ রান দরকার। এমন সমীকরণে তো সহজ জয় প্রত্যাশিত।

জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার স্বপ্ন দেখতে থাকা শামীম ১০ বল বাকি থাকতে আউট। রশিদ খানের বলে উঁচু শট খেলে রহমানউল্লাহ গুরবাজের ক্যাচ তিনি। ডাগআউটে হতাশায় ক্যাপ খুলে ফেললেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

অথচ ৪৩ বলে ৭৩ রানের ওই জুটি ভাঙার পর তখন চাপমুক্ত বাংলাদেশ। ১০ বলে দরকার ১৮ রান! হৃদয় ও মেহেদী হাসান মিরাজ সতর্ক ব্যাটিংয়ে এগিয়ে গেলেন। ১২ বলে দরকার ১৪ রান।

ফজল হক ফারুকীর গতি সামলে বাউন্ডারি মারেন হৃদয়। ওই ওভারে এলো ৮ রান।

শেষ দিকে খরুচে ছিল বাংলাদেশ

শেষ ৬ বলে রান ৬ দরকার। মিরাজ করিম জানাতকে কভার ড্রাইভে সপাটে পিটিয়ে বল বাউন্ডারি ছাড়া করলেন। 

নাটক হলো পরের বল থেকে। মিডউইকেটে সরাসরি পুল করে মোহাম্মদ নবীর ক্যাচ মিরাজ (৮)। একে একে তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদকে খালি হাতে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করেন জানাত।

৪৭ রানে নন স্ট্রাইকে থাকা হৃদয় আক্ষেপে ফেটে পড়ছিলেন হয়তো। এত কাছে গিয়েও হারের শঙ্কা মাথায় চেপে বসেছিল তার।

অপ্রত্যাশিত হ্যাটট্রিকে জয়ের স্বপ্ন ফিঁকে হতে বসেছিল। শরিফুল ইসলাম নামেন ইনিংসের পঞ্চম বলে। দরকার ২ রান। দুর্দান্ত বোলিংয়ে জানাত তখন আত্মবিশ্বাসের চূড়ায়। সিঙ্গেল নিয়ে হৃদয়কে স্ট্রাইকে আনার চিন্তা বাদ দিয়ে ফাঁক খুঁজে অফসাইডের বাইরে থাকা বল পাঠালেন সীমানার বাইরে।

ম্যাচসেরা হৃদয়

হৃদয় যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। নিজের হাফ সেঞ্চুরি না হলেও তো দল জিতেছে। ৪৭ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচসেরা এই ব্যাটার জানালেন, শেষ ওভারে কতটা চাপে ছিলেন, ‘শেষ ওভারে স্ট্রাইক না পেয়ে নার্ভাস ছিলাম আমি। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল ব্যাটার হিসেবে ম্যাচ শেষ করতে পারবো।’

দ্রুত টপ অর্ডার ব্যাটারদের বিদায়ের পরও সাকিবের বিশ্বাস ছিল, টেল এন্ডাররা দায়িত্ব যথাযথ পালন করবেন। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বললেন, ‘নার্ভাসনেস ছিল। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস ছিল টেল এন্ডাররা ব্যাট করতে পারবে। আজ ম্যাচ শেষ করার দায়িত্ব ছিল শরিফুলের। দারুণ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, এই মাঠের জন্য রোমাঞ্চকর।’