শান্তিপূর্ণ অবস্থানে রাজপথে থাকবে আ.লীগও

বিএনপি ও তাদের যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলো মাঠে নামলে শনিবার (২৯ জুলাই) শান্তিপূর্ণ অবস্থানে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোও। এরই মধ্যে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় শান্তি সমাবেশ এবং দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করতে চাইলেও বিরোধীরা মাঠে নামলে বসে থাকবেন না তারাও। কোনও ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে কঠোর জবাব দিতে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন তারা।

এদিকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে বিএনপি ও তাদের সমমনারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তারা বলেন, সেই শঙ্কা থেকেই সরকারবিরোধীদের অবস্থান কর্মসূচির নামে সম্ভাব্য নৈরাজ্য প্রতিরোধে তাদের শান্তি সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি ও তাদের সমমনারা ঢাকার প্রবেশপথে শনিবার অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে তারা যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেই জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা সংঘাত চাই না। কিন্তু নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। সেজন্য আমাদের নেতাকর্মীদের আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

সরকারি দলের একটি সূত্র বলছে, ডিএমপির নির্দেশনার পরেও মাঠে নামতে পারে বিএনপি ও তাদের যুগপৎ সঙ্গীরা। তারা একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। সেজন্য আওয়ামী লীগও দলের সব নেতাকর্মীকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যদি পরিস্থিতি সেই দিকেই যায়, তবে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে আমরা ওয়াকেবহাল। তারা যাতে নৈরাজ্য ও অশান্তি তৈরি করতে না পারে সেজন্য আমাদের শান্তি সমাবেশ চলছে। আমাদের নেতাকর্মীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সম্মান জানিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে কোনও ধরনের ঝামেলা করতে দেওয়া হবে না, কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।’

বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার পর রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, ‘ডিএমপির বিধিনিষেধের পরও বিএনপি মাঠে নামলে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা থাকবে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে বিএনপি মাঠে নামলে আমরাও ছাড় দেবো না, অশান্তি তৈরি করতে দেবো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সাধারণ সম্পাদক সংঘাতে না জড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবো। তবে কেউ আক্রমণ করলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা মাঠে থাকবো।

শুক্রবার নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় শনিবারের অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, তারা টঙ্গী, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, আজমপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, বাবুবাজার, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর, শনির আখড়া ও ধোলাইপাড়ে শান্তি সমাবেশ করছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, বাবু বাজার, শ্যামপুর, কমলাপুর অবস্থান নেবেন। তারা সব স্পটে থাকলেও যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ও বাবুবাজার ব্রিজের নিচে তাদের বড় জমায়েত হবে। এসব স্পটে তারা বেলা ১১টা থেকে টানা ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করবেন।

শুক্রবার যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপি অবস্থান কর্মসূচির নামে রাস্তা বন্ধ করলে তাদের চলার পথই বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দেবে।’

বিএনপির এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করবেন, আপনাদের চলার রাস্তা বন্ধ করে দেবো। চোখ রাঙাবেন না, দেশি-বিদেশি যারাই চোখ রাঙাবেন, তাদের বলে দিচ্ছি, আমাদের শিকড় অনেক গভীরে। চোখ রাঙিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন না।’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ জানান, যাত্রাবাড়ীতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী জমায়েতে নেতৃত্ব দেবেন। অপরদিকে বাবুবাজার ব্রিজের নিজের জমায়েতে নেতৃত্ব দেবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও নগরের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা জানান, তারা গাবতলী-আমিনবাজার এবং উত্তরা-আজমপুরে জমায়েত হয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করবেন।

এদিকে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তারা আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, টঙ্গী ব্রিজ, আমিনবাজার, বাবুবাজার, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর ব্রিজ, শনির আখড়া ও ধোলাইরপাড়ে শান্তি সমাবেশ করবেন।

এদিকে, ঢাকার প্রবেশপথে শনিবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ শান্তি সমাবেশ করার কর্মসূচি দিয়েছে। শনিবার সকাল ১১টায় আমিন বাজার, গাবতলী, টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুরে এ কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।

শুক্রবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের দফতর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি-সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, ষড়যন্ত্র এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে রাজধানীর প্রবেশমুখে (আমিনবাজার, গাবতলী, টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুর) সকাল ১১টায় শান্তি সমাবেশ করবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সমাবেশগুলোতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।