STEMI: ‘স্টেমি’র কারণেই অকালমৃত্যু বাড়ছে? HT বাংলাকে জানালেন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

তরুণদের মধ্যেও ইদানীং বাড়ছে হৃদরোগ। বদলে যাওয়া জীবনধারার কারণে প্রায়ই উচ্চ রক্তচাপের শিকার হচ্ছে অনেকে। এমনকী হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ইদানীং সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হচ্ছে কম বয়সীদের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর মর্মান্তিক খবর। হৃদরোগের এই সূত্র ধরে আলোচনা করতে করতে অঞ্জন সিওটিয়ার মুখে জানা গেল একটি বিশেষরকম হার্ট অ্যাটাকের কথা। কী সেই রোগ? STEMI বা স্টেমি। কেন এই হার্ট অ্যাটাক বিপজ্জনক, সে কথাই তিনি বিস্তারিত জানালেন হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে। একই সঙ্গে কেন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্টেমি, উঠল সে প্রসঙ্গও।

স্টেমি বা STEMI কেমন ধরনের হার্ট অ্যাটাক?

হার্টের ভিতর রক্ত প্রবেশ করে আর্টারি বা ধমনী দিয়ে। সাধারণত, সেই ধমনীতে কোনও বাধা বা ব্লকেজ তৈরি হলে রক্ত ঠিক মতো চলাচল করতে পারে না। এর ফলেই বুকে ব্যথা – হার্ট অ্যাটাক। স্টেমি এরই চরম রূপ। বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের হৃদরোগ বিভাগের ডিরেক্টর চিকিৎসক অঞ্জন সিওটিয়া বলেন, ‘STEMI- এর পুরো নাম ST-সেগমেন্ট এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। অর্থাৎ, ধমনীর ভিতরে ব্লকেজ বাড়তে বাড়তে একটা সময় একেবারেই বন্ধ করে দেয় ধমনী। এর ফলে তৎক্ষণাৎ হার্ট অ্যাটাক। দ্রুত চিকিৎসা না হলে কয়েক মুহূর্তে ফুরিয়ে যায় একটা প্রাণ।’

স্টেমি কেমন ধরনের হার্ট অ্যাটাক?

(প্রতীকী ছবি: সৌজন্য ফ্রিপিক)

কীভাবে ধরা পড়ে এই সমস্যা? কেনই বা এমন নাম?

ইসিজিতেই ধরা পড়ে হার্টের এই সমস্যা। আর সেই পরীক্ষারই একটি প্রযুক্তিগত পরিভাষা ST। চিকিৎসক অঞ্জন সিওটিয়া বলেন, ‘হৃদপিণ্ড যখন সংকুচিত থেকে প্রসারিত তখন এই ST-এর তথ্য ইসিজিতে রেকর্ড হয়। হার্টের ধমনীতে কোনও সমস্যা থাকলে তা ইসিজিতে অস্বাভাবিক দাগ হিসেবে ধরা পড়ে।’ সেই থেকেই হার্ট অ্যাটাকটির নাম ‘স্টেমি’।

(আরও পড়ুন: পেটের ডানদিক টনটন করে মাঝে মাঝেই? কী কারণে হয় এমন ব্যথা)

ভয় ঠিক কোন জায়গায়?

যেহেতু এই রোগে পুরো ধমনীই ব্লক হয়ে যায়, তাই অন্যান্য হার্ট অ্যাটাকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ভয়াবহ স্টেমি। দ্রুত চিকিৎসা না করালে রোগীর মৃত্যু আটকানো মুশকিল। ভয়টা শুধু সেখানেই তা নয়। এই প্রসঙ্গে অঞ্জন বলেন, ‘৪০ থেকে ৭০ বছর বয়সীরা এই হার্ট অ্যাটাকের কবলে সবচেয়ে বেশি পড়েন। আমার দেখা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন পুরুষ। তবে মহিলাদেরও এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে।’

(আরও পড়ুন: এক ইনজেকশনই কমাবে ওজন আর হৃদরোগের ঝুঁকি! কী নাম, কোথায় মেলে জানেন)

ভয় ঠিক কোন জায়গায়?

(প্রতীকী ছবি: সৌজন্য ফ্রিপিক)

কী কী উপসর্গ দেখলে সতর্ক হব?

খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছিল কথা বলতে বলতে। চিকিৎসককে সে প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘স্টেমির উপসর্গ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। তবে সাধারণ কিছু উপসর্গের মধ্যে রয়েছে গলা, চোয়াল, হাতে ব্যথা, কোমরে ব্যথা। এছাড়াও রয়েছে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া, ঘামতে থাকা, মাথা ঘোরার মতো সমস্যা।’ এই উপসর্গগুলি দেখলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

রোগের চিকিৎসা কী?

তৎক্ষণাৎ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন একমাত্র এই বিষয়ে দক্ষ চিকিৎসক। কিন্তু ওষুধের গুণে সুস্থ হয়ে উঠলে বেশ কয়েকটি নিয়মকানুনের মধ্যে থাকতে হয় রোগীকে। তার প্রথমটাই হল জীবনধারায় বদল আনা। ভাজাভুজি খাওয়াদাওয়া থেকে ধূমপানের মতো অভ্যাস ছাড়তে হয়। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হয়। হার্টের পরীক্ষাও নিয়মিত করানো জরুরি।