ভাত–কাপড়ের দায়িত্ব বিবাহবিচ্ছেদের পরও, প্রাক্তন স্বামীকে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের

বিয়ে করার কয়েক বছর পর আর স্ত্রীকে পছন্দ হচ্ছে না। তাই তাঁর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতে হবে। এটা এখন একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিয়ের সময় লোকাচার থেকে সাতপাক ঘুরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন স্বামী–স্ত্রী। সেখানে একপলকে বিবাহবিচ্ছেদ করতে দ্বিধাবোধ করেন না স্বামী। এমনই একটি মামলা এসেছিল কলকাতা হাইকোর্টে। যেখানে বিয়ের মণ্ডপে অগ্নিকে সাক্ষী রেখে সুখে–দুঃখে থাকার অঙ্গীকার করা হয়, ভাত–কাপড়ের দায়িত্ব নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়, সেখানে একপলকে সব উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটাই মনে করিয়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।

এদিকে এইসব জ্ঞানের কথা শুনতে রাজি নন বিবাহবিচ্ছেদ করা স্বামী। তিনি কোনও খোরপোশ দিতেও রাজি নন। তাই গোটা সম্পর্কটাই অস্বীকার করেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী তাঁর বাড়ি ছেড়ে দেন। এমনকী আইনের মাধ্যমে খোরপোশ দাবি করেন। সেই কারণে আলিপুর আদালতে মামলা হলে বিচারক খোরপোশ দিতে নির্দেশ দেন। তখন ওই স্বামী পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে যান। এমনকী নিজের চিৎপুর এলাকার বসতভিটে বিক্রি করে চম্পট দেন। ৬ বছর তাঁকে খুঁজে পায়নি পুলিশও। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়েছিল চিৎপুর থানার পুলিশ।

অন্যদিকে হাল ছাড়েননি স্ত্রী। মাত্র তিন হাজার টাকা খোরপোশ চেয়েছিলেন তিনি। যা দিতে অস্বীকার করেন স্বামী। আর চম্পট দেন। এরপর স্বামীর সন্ধানে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন স্ত্রী। তারপর আদালতের নির্দেশে খোঁজ শুরু হয় পলাতক স্বামীর। ২০১৭ সালে এই স্বামীর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল আলিপুর আদালত। তবে তার পরও সন্ধান মেলেনি। কলকাতা হাইকোর্ট এই পলাতক স্বামীকে খুঁজে বের করতে দায়িত্ব দেয় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে। তার পরই জোর তল্লাশি শুরু হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:‌ স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে গ্রেফতার আরও দু’‌জন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং নিয়েই আলোড়ন

তারপর ঠিক কী ঘটল?‌ কলকাতা গোয়েন্দা বিভাগ দায়িত্ব নিয়েই সমস্ত সোর্স কাজে লাগিয়ে দেয়। আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় লুকিয়ে থাকা ওই স্বামীকে আটক করে। তারপর তাঁকে কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করে। তখন সেখানে উপস্থিত প্রাক্তন স্ত্রীও। দু’‌জনেই তখন পরস্পরের উপর ক্ষেপে রয়েছেন। এমন সময় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‌অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে খোরপোশ। বকেয়া মিটে গেলে চালু রাখতে হবে খোরপোশ। ভাত–কাপড়ের দায়িত্ব অস্বীকার করা যায় না। বিবাহবিচ্ছেদের পরও তা পালন করতে হবে।’‌ বিচারপতির নির্দেশের পর বকেয়া ৫৫ হাজার টাকা মিটিয়ে দিয়েছেন স্বামী।