‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছে, কমিশন গঠন করে তাদেরও চিহ্নিত করবো’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন করা হবে বলে জানালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেছেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শেষ করতে পেরেছি আমরা। খুনিদের মধ্যে যারা বাংলাদেশে ছিল এবং দেশের বাইরে ছিল, তাদের কয়েকজনের রায় কার্যকর করা হয়েছে। অনেকে জানতে চান, বাকি খুনিদের কবে ফিরিয়ে আনা হবে। তাদের বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি বিদেশে অবস্থান করছে। এর মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্রে, অন্যজন কানাডায়। যে যুক্তরাষ্ট্রে আছে, তাকে ফেরানোর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কানাডায় যে আছে, তাকেও ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে কানাডা সরকারের আইন অনুযায়ী, ফেরানোর ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। তাই আনা যাচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত খুনিদের দেশে এনে রায় কার্যকর না হবে, ততদিন চেষ্টা চালিয়ে যাবো। যতক্ষণ পর্যন্ত বেঁচে আছি, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃথিবীতে জীবিত থাকতে দেবো না। একইসঙ্গে হত্যার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছে, তাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।’

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সড়ক বাজারে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, তারা বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমরা বাংলাদেশকে সোনার বাংলা বানিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে দেখাবো, কোনোদিন বাংলাদেশ মরেনি আর মরবেও না। বঙ্গবন্ধুকে মারা যায় না, বঙ্গবন্ধু সবসময় মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন।’ 

বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছে, তাদেরও চিহ্নিত করবো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তবে প্রতিহিংসার জন্য তাদের চিহ্নিত করবো না। তাদের চিহ্নিত করবো এজন্য যে, যেন দেশের মানুষকে সত্যিকারের ইতিহাস উপহার দিতে পারি। নতুন প্রজন্ম যেন জানতে পারে, বাংলাদেশের সর্বনাশ এরাই করেছিল। এদের পরিবার থেকে যেন নতুন প্রজন্ম সাবধানে থাকে। নতুন প্রজন্ম যেন কোনোদিন দেশের ভার এদের হাতে তুলে না দেয়। বাংলাদেশ যদি তাদের হাতে চলে যায়, তারা ধ্বংস করে ফেলবে। আবারও ১৯৭১-এর মতো মানুষকে হত্যা করবে। তাই হত্যার নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন করবো। আমরা সেই ড্রাফট করে ফেলেছি। চূড়ান্ত করার পর সেই ড্রাফট সংসদে তুলে ধরবো।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখনই দেশের হাল ধরেছেন, তখনই উন্নয়নে বদলে গেছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতু, সেটি করে দেখিয়েছেন তার কন্যা। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন, সবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হোক, প্রত্যেককে ঘর উপহার দিয়ে তাও বাস্তবায়ন করেছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল আইনের শাসন থাকবে, যুদ্ধাপরাধের বিচার করে তাও প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার কন্যা।’

ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই, ষড়যন্ত্র সবসময় অন্ধকারে হয় উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অন্ধকারের রাজনীতিবিদরা এখনও বিএনপি-জামায়াতে আছে। এখনও ষড়যন্ত্র করছে। তারা সব ধ্বংস করতে চায়, সবকিছু নিয়ে মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়। সত্যের কাছ দিয়ে হাঁটে না। এদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ার শপথ নিতে হবে।’

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অথবা ২০২৪-এর জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও জয়যুক্ত করতে হবে। আপনারা জয়যুক্ত করলে দেশ সোনার বাংলা হবে। উন্নয়নে আরও এগিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ উপহার দেবেন। আমরা যদি তাকে সুযোগ দিই, তিনি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন।’ 

আলোচনা সভায় বক্তব্যের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করে নৌকা প্রতীকে ভোট চান আইনমন্ত্রী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। সভায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।