Bilkis Bano Case in SC: ‘রাজ্য পারেনি বলেই তো CBI তদন্ত করেছিল’, বিলিকস মামলায় গুজরাটকে ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের

বিলকিস বানোর অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল গুজরাট সরকার। ২০০২ সালের ঘটনায় গতবছর স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি দেওয়া হয় ১১ অপরাধীকে। তার বিরোধিতায় মামলা হয়েছে শীর্ষ আদালতে। সেই মামলারই শুনানি চলছে। সেই শুনানি চলাকালীন বৃহস্পতিবার গুজরাট সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করল, ‘কেন বেছে বেছে এই ১১ জনের সাজা মুকুব করা হল?’ পাশাপাশি শীর্ষ আদালত আরও প্রশ্ন করে, ‘কেন অপরাধীদের সাজা মুকুব করার আগে মুম্বইয়ের আদালতের (২০০২ সালের ঘটনার মামলায় যে আদালত দোষীদের সাজা শুনিয়েছিল) মতামত গ্রহণ করা হয়নি?’

গুজরাট সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে হাজির হওয়া অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু অবশ্য এই মামলায় যুক্তি দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের এক মামলার রায়দানের প্রেক্ষিতেই গুজরাট সরকার এহেন পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল। প্রসঙ্গত, বিলকিস বানোর গণধর্ষকদের গত ১৫ অগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে বিতর্ক চরমে। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের মার্চ মাসে দাহোদ জেলায় লিমখেড়া তালুকায় রাধিকাপুর গ্রামে একদল দুষ্কৃতী বিলকিস বানোর পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছিল। গণধর্ষণ করা হয় বিলকিসকে। খুন করা হয়েছিল তাঁর পরিবারের ১৪ জনকে। পরে ২০০৪ সালে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। মুম্বইয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীকালে সেই সাজার মেয়াদ বহাল রেখেছিল বম্বে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট।

তবে গতবছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার পঞ্চমহলের কালেক্টর সুজল মায়াত্রার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দোষীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে। সর্বসম্মতিক্রমে কারাবাসের সময় কমানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় কমিটিতে। সেই মতো গতবছর স্বাধীনতা দিবসের দিন দোষীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সাজাপ্রাপ্তদের আগাম মুক্তি দেওয়ার পর প্রকাশ্যে তাদের মালা পরানো হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল সংবর্ধনা। মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল। এই আবহে সুপ্রিম কোর্ট গতকাল গুজরাট সরকারকে প্রশ্ন করে, গুজরাট সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আে সিবিআই বা মুম্বইয়ের আদালতের মতামত কেন নেয়নি? জবাবে গুজরাটে পক্ষে সওয়াল করা এএসজি বলেন, ‘গোধরা দায়রা আদালতের বিচারকের মতামতে একটি কমিটি গঠন করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ তখন সুপ্রিম বিচারপতি বিভি নাগারত্না পালটা বলেন, ‘গোধরা আদালতে তো অপরাধীদের সাজা হয়নি। হয়েছিল মুম্বই আদালতে।’ জবাবে এএসজি বলেন, ‘যে বিচারক এই রায় শুনিয়েছিলেন, তিনি অবসর নিয়েছেন। তাই এই মামলায় গুজরাটের আদালতে মতামত গ্রহণ করা হোক কি মুম্বইতে, তাতে বেশি কিছু ফারাক আসে না।’ এরপরই বিচারপতি বলেন, ‘এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মামলার প্রেক্ষাপট মাথায় রাখা উচিত। ভুলে গেলে চলবে না সরকার এই মামলার তদন্ত সঠিক ভাবে করতে পারেনি বলেই সিবিআই-কে তদন্তভার দেওয়া হয়েছিল। গুজরাট থেকে মামলা মহারাষ্ট্রে সরানো হয়েছিল।’

এর আগে বিলকিস বানোর অপরাধীদের আগাম মুক্তি নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখ্য, শীর্ষ আদালতে করা এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে অপরাধীদের আগাম মুক্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই রিট পিটিশনের আগে গুজরাট হাই কোর্টে অপরাধীদের আবেদন নাকচ হয়ে গিয়েছিল। এই আবহে নিয়ম মাফিক, সুপ্রিম কোর্টে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করা যেত। বদলে রিট পিটিশন করা হয়েছিল এবং তা গ্রহণ করেই শীর্ষ আদালতে মামলা চলে। এবং সেই মামলার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে পদক্ষেপ করে অপরাধীদের মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। এই আবহে বর্তমান বেঞ্চ প্রশ্ন করে, ‘হাই কোর্টের নির্দেশকে কি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে? তা যদি না হয়ে থাকে তাহলে সেই সময় শীর্ষ আদালত কোন এক্তিয়ারে হাই কোর্টের রায়কে সরিয়ে রেখেছিল?’