অলরাউন্ড ক্রিকেট খেলে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর মিশন বাংলাদেশের

আগামী অক্টোবরে ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। তারই প্রস্তুতি মঞ্চ এবারের এশিয়া কাপ। ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতা বলে এবার বড় কিছুরই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। তাদের প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ব্যাটে-বলে ভালো ক্রিকেট খেলে স্বাগতিকদের হারানোর মিশন সাকিব আল হাসানদের। আজ বৃহস্পতিবার ক্যান্ডির পাল্লেকেলে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায়, সরাসরি দেখা যাবে টি স্পোর্টসে।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ফাইনাল। এখন পর্যন্ত তিনবার ফাইনাল খেলেও শিরোপার স্বাদ পায়নি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এবার শিরোপা খরা ঘোচানোর মিশনে জয় দিয়ে আসর শুরু করতে উদগ্রীব সাকিবরা। যদিও ইনজুরি সমস্যায় বাংলাদেশ দল টালমাটাল হয়ে আছে। ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে লিটন দাস ছিটকে পড়ায় কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। তারকা এই ওপেনারের ছিটকে যাওয়ায় নতুন করে ডাক পেয়েছেন এনামুল হক বিজয়। হুট করে ডাক পাওয়া বিজয়ের প্রথম ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণই। তরুণ নাঈম শেখ এবং আনক্যাপড তানজিদ হাসান তামিমকেই হয়তো ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে হবে। 

যদিও এই পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে। সেক্ষেত্রে সাকিবকে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে হবে। নাঈম ও জুনিয়র তামিমের মধ্যে একজন ওপেনিং করবেন নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে। যদিও সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটিং অর্ডারের পরিকল্পনা ফাঁস করতে চাননি অধিনায়ক সাকিব। তবে লিটনের ইনজুরি যে কিছুটা সমস্যায় ফেলেছে বাংলাদেশকে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত দুই দল ১৫ বার মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে শ্রীলঙ্কা ১২টি এবং বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচ জিতেছে। তবে এশিয়া কাপে দুই দলের শেষ পাঁচ ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। সাকিবদের জয়ের সুযোগ থাকছে মূলত লঙ্কান শিবিরের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে। শ্রীলঙ্কা যেন একটি হাসপাতাল! ইনজুরির কারণে সিনিয়র বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে বাদ দিয়েই এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করতে হয়েছে তাদের। চোটের কারণে দলের সেরা তিন পেসার দুশমান্থ চামিরা, লাহিরু কুমারা, দিলশান মাদুশাঙ্কা ছিটকে গেছেন। পাশাপাশি লেগ স্পিন অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা নেই। সবমিলিয়ে খর্বশক্তির দলে পরিণত হয়েছে লঙ্কানরা।

যদিও সাকিব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে গেলে চার বিভাগেই ভালো করতে হবে। কোনও এক বিভাগে খারাপ করলে জেতা সম্ভব হবে না, ‘আসলে আমি একটা বিভাগের ওপর নির্ভর করে জিততে চাই না। আমার কাছে মনে হয় আমরা যদি প্রতিটি বিভাগেই ভালো খেলি সেটা পেস বোলিং আক্রমণ হতে পারে, স্পিনার, ব্যাটার, ফিল্ডার হতে পারে। এই চারটা জায়গাতে যদি আমরা ভালো খেলি তাহলে আমাদের ভালোভাবে জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। এবং আমরা ওটাই করার চেষ্টা করবো, অলরাউন্ড ক্রিকেট খেলতে চাই।’

অন্যদিকে বাংলাদেশকে বেশ সমীহ করছেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা, ‘আমরা জানি, ভারত ও পাকিস্তান কতটা দাপুটে। আমরা জানি, আমরা ভালো দল। বাংলাদেশও ভালো দল।’

সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মধ্যকার ম্যাচগুলোতে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিশেষ করে নিদাহাস ট্রফির ওই ম্যাচের পর থেকে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে দুই দলের লড়াই নিয়ে ভক্তদের মধ্যে নানা রকম উত্তপ্ত পরিস্থিতির তৈরি হয়। যদিও সংবাদ সম্মেলনে দুই দলের দুই অধিনায়ক বৈরিতা নিয়ে ছিলেন এক মেরুতে।  

বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব বলেছেন, ‘আবেগের ক্ষেত্রে আসলে ম্যাচ খেলে বোঝা যাবে আমরা কোন অবস্থায় আছি। ড্রেসিংরুম এখন অনেক বেশি শান্ত। আসলে আমি বৈরিতা হিসেবে চিন্তা করতে চাই না। এই দলের খেলা হলে আমরা বেশ ভালো ক্রিকেট খেলে থাকি। এই ব্যাপারটি দর্শক এবং ব্রডকাস্টারদের জন্য বেশ ভালো। একটি ভালো ম্যাচ দেখা যায়।’

স্বাগতিক দলের অধিনায়ক শানাকাও যেন সাকিবের সুরে তাল মেলালেন, ‘এটা আসলে বাইরের ব্যাপার বলেই মনে হয়। আমাদের দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঝে সম্পর্ক ভালো। বাইরের ব্যাপার তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আমাদের ভ্রাতৃত্ব ভালো।’

মাঠের লড়াই নিয়ে শ্রীলঙ্কার নানা পরিকল্পনা থাকতেই পারে। সংবাদ সম্মেলনে সেটি বুঝতে দেননি লঙ্কান অধিনায়ক। উল্টো বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়ে গেলেন তিনি, ‘আমরা জানি আমরা ভালো দল। বাংলাদেশও ভালো দল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এশিয়া কাপ বা কোনও বিশ্বকাপ জেতেনি। তাদের সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় আছে। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে এটি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কোথাও না কোথাও শুরু করতে হবে। আগে আমরা ভারতের বিপক্ষেই বেশি খেলতাম। এখন ব্যাপারটি নতুন। বাংলাদেশ ভালো করতে চায়। আমি ‘‘রাইভালরি’’ দেখি না। তবে ক্রিকেটের ধরনই এমন।’