ডিএমপির ‘নিরাপদে বাস ব্যবহার প্রকল্প’ কাজে সমন্বয় নেই

ঢাকা মহানগরীর সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে ‘নিরাপদে বাস ব্যবহারের পরীক্ষামূলক প্রকল্প’ চালু করেছে ডিএমপি ট্রাফিক গুলশান বিভাগ। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় ডিএমপির ‘ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্ট’ এর অধীনে বনানীর কাকলী বাস বে’তে (মহাখালী অভিমুখী) সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে। শেষ হবে ২৭ সেপ্টেম্বর।

প্রায় মাসব্যাপী (শুক্র ও শনিবার ছাড়া) চলা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য যাত্রীদের নিরাপদে বাসে ওঠানামার জন্য বাসচালক ও হেলপারদের বাস স্ট্যান্ড ও বাস বে’তে গাড়ি থামানোর জন্য উৎসাহিত করা, যাত্রীদেরও নিরাপদে বাসে ওঠানামার জন্য বাস স্ট্যান্ড ব্যবহারের অনুরোধ করা। পাশাপশি সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা, যাতে সড়ক ব্যবহারকারীরা ট্রাফিক আইন মেনে চলেন। এর বাহিরে বাসচালক ও যাত্রীদের সচেতন করতে বনানী-কাকলি ফ্লাইওভার ও যাত্রী ছাউনিতে ব্যানার টানানো হয়েছে।

তবে বিকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পের জোরদার কোনও কার্যক্রম নেই। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এর কার্যক্রম চলার কথা থাকলেও সকাল ১১টা পর্যন্ত ভলান্টিয়াররা কাজ করে চলে যান। পরে বিকালে আবার ৪টার দিকে আসেন। তবে দ্বায়িত্বে থাকা ৪ ভলান্টিয়ারের কোনও কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। তারা লিফলেট হাতে অবসর বসে ছিলেন।

তারা জানান, সকাল আর বিকাল এই দুই সময় যাত্রী বেশি থাকায় তখন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

লিফলেট বিতরণ না করে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘বাস শ্রমিক ও যাত্রীরা কেউই কথা শোনেন না। তাদের অনুরোধ করা হলেও তারা বাস বে ব্যবহার করছেন না। সড়ক থেকেই লোক ওঠানামা করাচ্ছেন’।

পরে এই প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে আবারও লিফলেট বিতরণের কাজে নেমে পড়েন তারা। তবে ভলান্টিয়ারদের মাঝে কাজের কোনও সমন্বয় ছিল না। সবাই একই বাস বা ব্যক্তির কাছে ছুটছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভলান্টিয়ার বলেন, ‘আমরা কীভাবে কাজ করবো সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও নির্দেশনা পাইনি। তাছাড়া সবাই এত ব্যস্ততার মাঝে থাকেন যে কারও সঙ্গে কথা বলবো সেই সুযোগও নেই। বাসচালকরা রানিং এ লোক ওঠানামা করায়। কাউকে লিফলেট দেবো সেই অবস্থাও নেই। এখানে থাকা দ্বায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা যদি বাসচালকদের বাধ্য করে বাস স্ট্যান্ড ছাড়া যেখানে সেখানে না থামার, তাহলে যাত্রীদেরও বোঝানো সম্ভব হবে যে বাস স্ট্যান্ডে এসে অপেক্ষা করাটা নিরাপদ।’

এ বিষয়ে বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর প্রবেশ মুখে দ্বায়িত্বে থাকা সার্জেন্ট কামরুল বলেন, ‘আজ প্রথম দিন। তাই হয়তো ভলান্টিয়াররা এই সড়কের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগছে। আশা করি পর দিন থেকে আরও জোরদার কার্যক্রম চলবে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকেও কাজ হচ্ছে। এখন অফিস ছুটির সময়, তাই সিগন্যাল ক্লিয়ার রাখতে হচ্ছে। তবে কিছুটা ফ্রি হলেই আমরা বাসচালকদের বাধ্য করছি বাস বে’তে গিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অব্যস্থাপনা আশা করছি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শৃঙ্খলায় ফিরবে।’

এদিকে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন যাত্রীরা। তারা বলেন, ‘বাসচালকরা যদি নিদিষ্ট স্থানে যাত্রী ওঠানামা করায়, তাহলে আমাদেরও সড়কের মাঝে এসে বাসে উঠতে হবে না। এটা যদি না করে তাহলে যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়িয়ে লাভ নেই। যারা সড়কে থাকবে, তারাই বাসে ওঠার সুযোগ পাবে। আমাদের দাঁড়িয়ে অপেক্ষাই করতে হবে।’

নিরাপদে বাস ব্যবহার প্রকল্পে যাত্রীদের প্রতি নির্দেশনা

১. রাস্তায় যেকোনও স্থান থেকে থেকে বাসে উঠবেন না বা নামবেন না।

২. নিরাপদে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে ওঠানামা করুন।

বাসচালক হেলপারদের প্রতি নির্দেশনা

১. বাম দিকের লেন ব্যবহার করে বাস স্ট্যান্ডে আসুন।

২. শুধু বাস স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিন।

প্রকল্পের যেকোনও অনুসন্ধানের জন্য ডিএমপি ট্রাফিক গুলশান বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা [email protected] এই ঠিকানায় মেইল করতে বলা হয়েছে।