রাজনীতিবিদদের ঐকমত্যে এসে দেশের রাজনীতি ঠিক করতে হবে

জনগণের ইচ্ছাকে অবমূল্যায়ন করে কোনও রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় গিয়ে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারবে না। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি ঐকমত্যে আসতে হবে। এতে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটেরও সমাধান হবে।

রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘সমঝোতা নাকি সহিংসতা কোন পথে আমরা?’ শীর্ষক অনালাইন একটি গোলটেবিল বৈঠক দেশের বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।

বৈঠকে মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সবাই ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা অন্য কিছু চিন্তা করতে পারে না। দুই পক্ষের কেউই সমঝোতায় যেতে যায় না। তারা চায় কেবল তাদেরটাই হোক। তৃতীয় পক্ষ ছাড়া এদের কখনও আলাপে বসানো যায় না। বাংলাদেশ এখন সুপার পাওয়ারের লড়াই চলছে। এর পরিণতি দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ বলতে পারে না। এ রকম অবস্থায় রাজনীতিবিদদেরই দেশের রাজনীতি ঠিক করতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমার মনে হয় বর্তমান পরিস্থিতে নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্দেশনা পাঠাতে পারে। দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে করে ঠিক করুক কোন পদ্ধতিতে তারা নির্বাচন করবে। এরপর তা কমিশনকে জানাক, কমিশন সে অনুযায়ী নির্বাচন করবে।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ক্ষমতার ঝুঁকি হচ্ছে স্বৈরাচারী হওয়া। এ জন্য ক্ষমতাকে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মধ্যে রাখতে হয়। জবাদিহি নিশ্চিত করতে হয়।

ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সব সমস্যার সমাধান এক দিনে করা যাবে না। সব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে করতে গেলে জগাখিচুড়ি হয়ে যাবে। আবার একটি দলের পক্ষেও সব সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য সবাইকে একসঙ্গে হয়ে সমাধান করতে হবে। আমরা একটি জায়গা থেকে শুরু করতে পারি, যেমন নির্বাচনি প্রক্রিয়া। নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে কী কী করা যেতে পারে, তার সুনর্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আলাপ শুরু করা যেতে পারে; কিছু বিষয়ে একমত হওয়া যে আমরা এই বিষয়গুলোতে হাত দেবো না।

গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সমঝোতা যে চাই, প্রথমে এটি নিয়ে সমঝোতা হওয়া দরকার। নির্বাচনি ব্যবস্থা এক দিনে ভাঙেনি, ধারাবাহিকভাবে ভেঙেছে। ত্রিদলীয় জোটের রূপরেখা তিন দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। তাই মূল কাজ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হওয়া। সবাইকে একমত হতে হবে যে আমরা প্রতিষ্ঠানে হাত দেবো না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলনে গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হলো একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রণয়ন করা। রাষ্ট্রব্যবস্থার গুণগত সংস্কার করে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে এগোচ্ছে।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. সাখাওয়াত হোসেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা, সুজনের প্রধান কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারসহ অন্যরা।