উত্তরপূর্বে সফল, উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণী মৃত্যু রুখতে রেলপথে আসছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি

রেললাইনে হাতি এবং বন্যপ্রাণীর মৃত্যু রুখতে এক বছর আগে চালু হয়েছিল ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম (আইডিএস)। উত্তর পূর্ব সীমান্ত প্রথম এই ব্যবস্থা চালু করা হয়। তাতে সাফল্য মেলায় এবার শিলিগুড়ির সেবক থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত ১৬৩ কিলোমিটার রেলপথে এই পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। গতকাল শনিবার রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে বনদফতরের আধিকারিকদের আলিপুরদুয়ার ডিআরএম অফিসে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি রেল ও বন্দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

আরও পড়ুন: ট্রেনের ধাক্কায় আবারও মৃত্যু হাতির! আগে থেকে কোনও খবর ছিল না, সাফাই রেলের

এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডি আর এম অমরজিৎ গৌতম, উত্তরবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল উজ্বল ঘোষ সহ রেল ও বনবিভাগের উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকরা। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে এই বৈঠক। বৈঠকের শেষে তাঁরা জানান, শিলিগুড়ির সেবক থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত ১৬৩ কিলোমিটার রেলপথে যাতে বন্য প্রাণী মারা না যায় সেই বিষয় নিয়েই ছিল এদিনের বৈঠক। আইডিএস আর কোথায় লাগু করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হয়।

অতীতে ট্রেনে কাটা পড়ে অনেক হাতির মৃত্যু হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে গত ২০ বছরে ১০০–এর কাছাকাছি হাতির মৃত্যু হয়েছে। যদিও ট্রেনের গতি কমানোর পর গত তিন বছরে এই সংখ্যাটা অনেকটাই কমেছে। গত তিন বছরে মাত্র ২ টি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। রেল ও বন দফতর আশাবাদি নতুন এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ হবে এবং বন্যপ্রাণীর মৃত্যু রোখা সম্ভব হবে। আইডিএস পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য প্রথম ধাপে ৭৯ কোটি ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রথম ধাপে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং কেরলে এটি চালু হলেও পরবর্তী সময়ে সারা ভারতে এটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে রেলের।

ডিআরএম জানান, বন্যপ্রাণীদের মৃত্যুর হার শূন্যে নামিয়ে আনাই হল রেলের লক্ষ্য। এর জন্য রেল এবং বনদফতর যৌথভাবে কাজ করবে। প্রসঙ্গত, রেলের সিগন্যাল এবং খবর আদান-প্রদানের জন্য রেললাইন বরাবর অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হয়েছে। এর সাহায্যেই আইডিএস প্রযুক্তি কার্যকর করা হবে। ফাইবারের সাহায্যে পৌঁছানো তরঙ্গের মাধ্যমে হাতির আনাগোনা বুঝতে পারবেন গেট ম্যান, স্টেশন মাস্টার, লোকোপাইলট এবং গার্ডরা। এর পাশাপাশি ভূমিধস, নাশকতা, ফাটল সংক্রান্ত বিষয় এর সাহায্যে বোঝা যাবে। অন্যদিকে, এদিনের বৈঠকে রেল ও বনদফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য রেলের কন্ট্রোল রুমে বনবিভাগের একজন আধিকারিককে ২৪ ঘণ্টার জন্য মোতায়েন রাখা হবে বলে জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ।