আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন। পাঁচদিন এই অধিবেশন চলবে। প্রথমদিন শেষবারের মতো সভা বসবে পুরনো ভবনে। মঙ্গলবার থেকে ত্রিকোণাকৃতি নতুন ভবনে বসবে অধিবেশন। তবে রবিবার ডাকা হয়েছে সর্বদলীয় বৈঠক। এই বিশেষ অধিবেশন ডাকার কারণ প্রকাশ্যে আনেনি মোদী সরকার। বিরোধীরা মনে করছেন, ওই সর্বদলীয় বৈঠকে হয়তো কেন্দ্রীয় সরকার অ্যাজেন্ডা জানাবে। তবে তার আগেই তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক। কারণ সংসদ ভবনের অফিসার থেকে মার্শাল, নিরাপত্তারক্ষী থেকে রিপোর্টিং বিভাগ, কর্মীদের পোশাক পাল্টে যাচ্ছে। তাঁদের পোশাকে থাকছে পদ্মফুল।
এদিকে দুই সভার কক্ষে সেক্রেটারি জেনারেলের সামনে সংসদের রিপোর্টিং এবং লেজিসলেটিভ ব্রাঞ্চের অফিসাররা বসেন। তাঁদের পোশাকেই পদ্ম থাকছে। নতুন সংসদ ভবনের (রাজ্যসভা কক্ষ) সিলিং থেকে শার্সির নকশায় আছে পদ্মফুল। আবার পোশাকেও পদ্ম। যা জানতে পেরে সমালোচনায় সরব হয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। সংসদ ভবনের কর্মীদের নতুন ইউনিফর্মও তৈরি হয়েছে। সংসদ ভবনের কর্মীদের পোশাকে ভারতীয় ছোঁয়া আনতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে খবর। এই ঘটনা নিয়ে এখন তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। এসব হঠাৎ করার প্রয়োজন পড়ল কেন? পদ্মকে সামনে রেখে কী বার্তা দিতে চাইছে সরকার? এসব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ মাণিকম টেগর বলেন, ‘ময়ূর এবং বাঘ তো জাতীয় পাখি ও জাতীয় পশু। সেসব কেন জায়গা পাচ্ছে না পোশাকে? কেন বিজেপির প্রতীক পদ্ম? ও! এগুলি তো বিজেপির নির্বাচনের চিহ্ন নয়। কেন এমন পতন মহাশয়।’ এই ভাষাতেই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে টুইট করে খোঁচা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা। এই প্রতিবাদ যখন চলছে তখন পোশাকের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। সংসদ সূত্রে খবর, সংসদভবনের কর্মীদের পোশাকে জুড়ছে নেহরু জ্য়াকেট, খাকি প্যান্ট। আর লোকসভা সেক্রেটারিয়টের কর্মীরা পরবেন সাফারি স্যুট। হাউস অফিসারদের পরনে থাকবে ম্যান্ডারিন কলারের, ক্রিম রংয়ের ছাপা শার্ট। তাতে গোলাপি রংয়ের পদ্ম আঁকা থাকবে। সংসদের উচ্চ এবং নিম্নকক্ষের মার্শালদের মাথায় থাকবে মণিপুরের পাগড়ি। সংসদভবনের নিরাপত্তারক্ষীদের পরনে সেনার মতো জংলি পোশাক। আমলারা এবার গাঢ় গোলাপি রংয়ের নেহরু জ্যাকেট এবং ক্রিম রংয়ের শার্ট পরবেন।
আরও পড়ুন: ‘মানুষের কাছে নিজের ভাবমূর্তি যথাযথ রাখতে হবে’, ইডি সাক্ষাতের আগে মন্তব্য অভিষেকের
আর কী জানা যাচ্ছে? এই পোশাক–বিধি বা ফতোয়া নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই। কংগ্রেস সাংসদ মাণিকম টেগরের কথায়, ‘সংসদের কর্মীদের পোশাকে পদ্ম লাগানোর কারণ বিজেপির প্রতীক পদ্ম। এটা অত্যন্ত নিম্নরুচি এবং বিভাজনের সাক্ষ্য বহন করছে।’ সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতা জন ব্রিট্টাস বলেন, ‘বিজেপি নেতারা কিছু জিনিস হজম করতে পারছেন না। তাই এই পরিবর্তন করা হচ্ছে। সংসদ হল রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে কাজ করার জায়গা। সেটা এই সরকারের থেকে আসা করা যায় না। তারা জাতির কথা ভাবে না। তাই এসব প্রতীক লাগাচ্ছে পোশাকে।’ যদিও বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের দাবি, এই পোশাক পরিবর্তন ও বিধি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা করেছেন। বিরোধীদের এখানে বিতর্ক তৈরি করা উচিত নয়। আর তৃণমূল কংগ্রেস মনে করছে, এই ধারণা পোশাকেরই ক্ষতি করবে।