ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা

দীর্ঘ ২৮ ঘণ্টা ধরে জ্বলেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট। গভীর রাতে লাগা আগুনে একে একে চোখের সামনে পুড়েছে ২১৭টি দোকান পুড়ে গেছে। আর সামনে দাঁড়িয়ে নিরুপায় হয়ে আহাজারি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কাছাকাছি যেসব ব্যবসায়ী ছিলেন, তাদের কেউ কেউ এসে কিছু মালামাল বের করতে পেরেছেন। তবে বেশিরভাগই কিছুই বের করতে পারেননি। কেউ কেউ অগ্নিকাণ্ডের খবরই পেয়েছেন সকালে। ততক্ষণে জীবন-ধারণের একমাত্র উৎসটি পুড়ে ছাই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেকের হিসাবের খাতাটাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পুড়েছে তাদের স্বপ্নও। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরই ঋণ করে এখানে দোকান করেন। নতুন করে শুরু করা নিয়ে রয়েছে নানান শঙ্কা।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা মার্কেটের সামনেই আলোচনায় বসেছেন। খোলা জায়গায় চেয়ার পেতে বসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, এই মুহূর্তে একে অন্যকে সহযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করছেন তারা। তাদের হতাশ না হওয়ারও আহ্বান জানাচ্ছেন অন্য ব্যবসায়ীরা।

এরই মধ্যে অনেকেই নিজেদের দোকান পরিষ্কার করতেও শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার সামনে বসে পোড়া ছাইয়ের দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন। পোড়া দোকানের সামনে টুল পেতে বসেছিলেন মো. শওকত আলী। তার দোকানের নাম শওকত জেনারেল স্টোর। প্রায় দেড় কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি এই ব্যবসায়ীর। সব হারিয়ে প্রায় নির্বাক তিনি। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পাওয়ার পর খুললেন মুখ। বললেন, ‘মার্কেটে আমার চারটি দোকান, সবগুলো দোকানের মালামালই পুড়ে গেছে। যখন আগুন লাগে, তখন আগুনের তাপে ঢুকতে পারিনি।

নিজেদের দোকান পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা

দোকানগুলোতে প্রায় দেড় কোটি টাকার মালামাল ছিল উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘সব পুড়ে ছাই। কাল (বৃহস্পতিবার সারা দিন আমার দোকান পুড়েছে, আর আমরা তা দাঁড়িয়ে দেখেছি। ডিপ্লোমা ও ড্যানো গুঁড়ো দুধ, হরলিকস, রূপচাঁদা ও তীর সয়াবিন তেল, ময়দা, আটা, চিনি ও ডিটারজেন্টসহ ১৩৬টি আইটেম ছিল। আমি ডিলার হিসেবে মালামাল বিক্রি করি। সব মালামাল পুড়ে গেছে, দোকানে ছাই ছাড়া কিছু নেই। আগুনে পুড়ে দোকানের দেওয়ালও নষ্ট হয়ে গেছে। এসব দোকান এক মাসেও ঠিক করা সম্ভব না।’ 

বেশিরভাগ দোকানেরই সব পুড়ে ছাই

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের এই ব্যস্ততম মার্কেটটিতে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে আগুন লাগে। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তখনও বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলছিল। পরবর্তীতে প্রতিটি দোকান এবং জায়গা তল্লাশি করে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে পুরোদমে আগুন নির্বাপণের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। যদিও আজ বিকালে ব্যবসায়ীরা দোকান পরিষ্কার করতে গেলে অনেকে দোকান থেকেই ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।

মালামাল যা অবশিষ্ট আছে সেগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে উত্তর সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ করা দোকানের সংখ্যা ছিল ৩৪৩টি। এরমধ্যে পুড়ে গেছে ২১৭টি। এসব দোকানের মালিকরা কেউ কেউ নিজেরাই ব্যবসা করতেন। আবার অনেকে দোকান ভাড়া দিয়েছেন। যারা ভাড়া দোকান করছিলেন; এই অবস্থায় তাদের যেমন দোকান ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয়। তেমনি ব্যবসা পরিচালনা করবেন কীভাবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

ক্ষতি হয়েছে দোকানের দেয়াল ও সাটারেরও

অন্যদিকে যারা দোকান ভাড়া দিয়েছিলেন, তারাও দোকান ভাড়া আদায় করতে পারবেন না। এমন পরিস্থিতিতে তারাও ক্ষত্রিগ্রস্ত হবেন বলে জানান ভাড়া দেওয়া দোকান মালিকরা। সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ নিয়ে দোকান ভাড়া দিয়েছিলেন মনির হোসেন। তার দোকান ভাড়ায় নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করতেন মো. শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। মনির হোসেন বলেন, ‘প্রায় ২০ লাখ টাকার কাপড় ছিল, সব পুড়ে শেষ। কিস্তিতে ঋণ নিয়ে দোকান চালাতেন শহিদুল। সন্ধ্যায় এসে দাঁড়ালে দেখতে পারতেন, কত লোক এসে দাঁড়িয়ে থাকে কিস্তির টাকা নেওয়ার জন্য।’

ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সামনে এক ব্যবসায়ী

ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম তামিম ফ্যাশন। ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া আছে। দোকানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হিসাবের খাতাটাও পুড়ে গেছে। এখন কী করবো জানি না।’

পুড়ে গেছে হিসাবের খাতাও

সরকারের কাছে দাবি আছে কিনা জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘কিছুই তো পাবো না, এখন দোকানটা আগের মতো করে দিলে আবার কোনোরকমে শুরু করতে চাই। নতুন করে শুরুর আশায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি।’