‘দুটি বিষয়ে সংশোধিত শ্রম আইনের ধারা পরিবর্তন জরুরি’

সংশোধিত শ্রম আইনের অধীনে প্রসূতিকালীন ভাতা ও যৌন হয়রানি বিষয়ক কমিটি গঠন সংক্রান্ত ধারাগুলো সংশোধনি আনা জরুরি। 

সোমবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর বনানী ক্লাবে ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সলিডারিটি সেন্টার এবং আই ল’ এর উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘রিসেন্ট অ্যামেন্ডমেন্টস অন দ্য মেটারনিটি বেনিফিটস অ্যান্ড প্রিভেনশন অব জেন্ডার বেজড ভায়োলেশন’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।

সভায় সংশোধিত শ্রম আইনের আওতায় প্রসূতিকালীন ভাতা ও যৌন হয়রানি কমিটি বিষয়ক যে দুটি জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা দায়ের করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া ও সুপারিশ নেওয়া হয় ও বর্তমানে শ্রম আইনে আর কিরূপ সংশোধনি বা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তা ছিলেন- ফ্লাড এর চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, ফ্লাডের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসিনা রশিদ, আইন ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, জেন্ডার লিড, সলিডারিটি সেন্টারের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আনিন্দিতা ঘোষ এবং সলিডারিটি সেন্টারের সাউথ এশিয়ান কোঅর্ডিনেটর সাব্বির হোসেন।

শুরুতে অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ সভার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। পরে ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম এ সংশ্লিষ্ট দুটি জনস্বার্থ বিষয়ক রিট মামলার প্রেক্ষাপট ও দায়ের করার সময় ও পরে কিরূপ সমস্যার মুখোমুখি হন তা তুলে ধরেন।

আলোচনাকালে আনিন্দিতা ঘোষ যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির নিরপেক্ষ সদস্যদের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার সময় নিরপেক্ষ সদস্য (কমিটিতে) হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ফ্যাক্টরির মালিকের বউ অথবা কর্তৃপক্ষের কোনও আত্মীয়। এতে অত্র কমিটির বিচার ব্যবস্থা সুষ্ঠু হয়ে ওঠে না। এছাড়াও শ্রমিকদের জন্য আইন ও বিধিমালা থাকলেও তা পালনের ক্ষেত্রে এতই সময় পার করা হয়ে থাকে যে ভুক্তভোগীরা কোনোরূপ বিচার পায় না।’

সাব্বির হোসেন বলেন, ‘যৌন হয়রানির কোনও অভিযোগ কমিটির সামনে আসলে শ্রমিক পক্ষে সাক্ষী পাওয়া যায় না। কারণ তারা মালিক পক্ষকে ভয় পায় এবং এ কারণে দেখা যায় যে, ৯০ শতাংশ মামলায় মালিকপক্ষ জিতে যাচ্ছে। এছাড়াও শ্রম আইন ও সংশোধনিগুলো যেখানে শ্রমিকদের কষ্ট লাঘব করার জন্য বানানোর দরকার ছিল সেখানে উল্টো তাদের দেওয়া অধিকারগুলো ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’

সভার মুক্ত আলোচনা পর্বে লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি শারমিন সুলতানা বলেন, ‘শ্রম আইন কমিটিতে শ্রম আইন প্রণয়ন করার সময় কোনও আইনজ্ঞ বা শ্রম আইনজীবী যারা প্রতিনিয়ত শ্রম আইন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদেরকে কমিটি সদস্য হিসেবে রাখা হয় না, যার জন্য এরূপ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’

আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক থেকে নাজমা আক্তার বলেন, ‘শ্রম আইন প্রণয়ন করা উচিৎ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করার জন্য নয়। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলেছেন- নারী কর্মকর্তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় হবে ৬ মাস, সেখানে নারী শ্রমিকরা কেন ১১২ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন? একজন শ্রমিকের কায়িক শ্রম কখনই একজন সরকারি কর্মকর্তার ডেস্ক জব থেকে কম হতে পারে না। এজন্য নারী শ্রমিকদেরও মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করে দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।’

এছাড়া সভায় বিআইএলএস, টেনারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, ফেয়ার ওয়্যার, এজিডব্লিউই, জিডব্লিউএসএফ’সহ সলিডারিটি সেন্টারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।