কেন আলু আমদানি?

আর মাত্র এক মাস পরেই বাজারে উঠবে নতুন আলু। এর মধ্যেই কেন আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিলো সরকার, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আলুর খুচরা মূল্য বেঁধে দিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। আড়তদার ও কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা মিলেই আলুর দাম বাড়াচ্ছে। তাই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকার প্রতি কেজি আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয় ৩৬ টাকা। তবে বাজারে ৬০ টাকার নিচে আলু নেই। কোথাও কোথাও ৭০ টাকা বা তারও বেশি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কোল্ড স্টোরেজ ও খুচরা কোনও পর্যায়েই আলু বিক্রি হচ্ছে না বলে সরকারের মনিটরিং টিম দেখতে পায়। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার (৩০ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায়।

দেশে আলুর উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু একটি মহল আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতায় লিপ্ত। তাদের শায়েস্তা করতে এবং বাজারে আলুর সরবরাহ বাড়াতে তাই আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দেড় মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আলুর দাম কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এ সময়ের মধ্যে আলুর দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীতে কেজি প্রতি আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। কোনও কারণ ছাড়াই দফায় দফায় দাম বাড়ায় অবাক হয়েছে ক্রেতারা। তারা হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, এমন দেশ আর কোথাও নেই যেখানে কোনও কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়ায়।

এদিকে আলু বা পেঁয়াজ কিংবা ডিম-সবজির বাড়তি দাম নিয়ে সদুত্তর নেই পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। এতদিন বৃষ্টির অজুহাত দেখালেও এখন তারা বলছেন, সরবরাহে সংকট ও বৃষ্টি পরবর্তী ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ায় বেড়েছে দাম। আবার কখনও বলছেন ডলার সংকট। আবার বলছেন, রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান যুদ্ধের কারণে এসব পণ্য উৎপাদন সামগ্রীর দাম বাড়ছে। যার প্রভাব পণ্যের ওপর পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার আলুর যে দাম ঠিক করে দিয়েছিল তাতে ব্যবসায়ীদের লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু তারা সেই দামের ধারে কাছেও থাকছে না। কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা একটি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে বলে মনে করে সরকার।

কোনও যৌক্তির কারণ ছাড়াই বাড়ছে আলু ও পেঁয়াজের দাম (ছবি: ফোকাস বাংলা)

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া আলু গত বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আর সেই আলু সোমবার (৩০ অক্টোবর) ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ৭০ টাকা কেজি দরে। যদিও সরকার নির্ধারিত দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর দাম এখনও কম আছে। দাম নাকি আরও বাড়বে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ও উন্নত জাত প্রবর্তনের কারণে দেশে আলুর উৎপাদন বেড়েছে। তাছাড়া আবহাওয়াও আলু উৎপাদনের অনুকূলে। সরকার বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে আলু রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু এ বছর অস্বাভাবিকভাবে আলুর দাম বেড়েছে। এর ফলে নিম্নআয়ের মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে।

নির্ধারিত মূল্য কার্যকরে মাঝে মাঝে বাজার অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তবে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় তা কাজ করছে না। কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে সংকট সৃষ্টি করেছে বলেও জানিয়েছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়গুলো বিশেষ করে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় আলুর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলো এই দাম নির্ধারণ করেই দায় শেষ করেছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো দাম বাস্তবায়নে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। যা অসাধু ব্যবসায়ীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াতে উৎসাহিত করেছে। ফলে আজ শুধু আলু নয়, পেঁয়াজ ডিমের দামও বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেখেছি যে সাধারণ মানুষ এত দাম দিয়ে আলু কিনতে পারছে না। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে আলুর দাম কম। আজ সোমবার থেকেই আইপি (ইম্পোর্ট পারমিট) ইস্যু করাও শুরু হবে। আলু আমদানি হলে দাম কমবে। মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে। আড়তদার ও কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা মিলেই দাম বাড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। দেশে আলুর উৎপাদন প্রচুর বেড়েছে। আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ও উন্নত জাত প্রবর্তনের কারণেই আলুর উৎপাদন বেড়েছে। এর মধ্যে আলুর দাম বেড়ে যাওয়া কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আরও পড়ুন- এবার আলু আমদানির সিদ্ধান্ত