সমন্বিত কর্মসূচি দেওয়ার আলোচনা বিরোধী দলগুলোতে

সরকার পতনের দাবিতে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াত ও যুগপতে যুক্ত দলগুলোর চতুর্থ দফার অবরোধ চলছে। এর বাইরে বাম ও ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলও সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি পালন করছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এবার এই দলগুলো নিজেদের কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় করার আলোচনা করছে। ইতোমধ্যে যুগপতে যুক্ত দলগুলোর সঙ্গে বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে তফসিল কেন্দ্র করে সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করতে আলোচনা করেছে বিভিন্ন দল। এরইমধ্যে দলগুলোর ভেতর আশানুরূপ ঐকমত্য এসেছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

গত কয়েক দিনে একাধিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন, এমন একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপতে যুক্ত সব দল চাইছে সরকারবিরোধী বাইরে থাকা দলগুলোকেও কর্মসূচিগত ঐকমত্যে নিয়ে আসতে। বিষয়টি আলোচনার মধ্যে থাকায় এখনই বৈঠকের বিষয় বা কিছু জানানো হচ্ছে না।’

যুগপতে যুক্ত একটি দলের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, ‘নির্বাচনি শিডিউল ঘোষণা হলে অলআউট প্রোগ্রামে যাবে সব দল। সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের বেশি কেউ থাকবে না।’

ইতোমধ্যে যুগপতের বাইরে থাকা বামজোট, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল ও জোটকে সমন্বিত কর্মসূচির আওতায় আনার কাজ চলমান রয়েছে। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হলে যার যার জায়গা থেকে এক ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করার বিষয়ে অগ্রগতি আছে বলেও জানান একজন নেতা। তবে কোনও নেতাই এ প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

ইতোমধ্যে বামজোটের পক্ষ থেকে ১০ নভেম্বর থেকে বিক্ষোভ ঘোষণা করা আছে। তফসিল হলে তাৎক্ষণিক দেশব্যাপী বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত রয়েছে। রবিবার জোটের অন্যতম নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সমঝোতা ছাড়া, কোনও ঐকমত্য ছাড়া তফসিল যদি দেয়, আমরা ওই দিনই সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি করবো। প্রয়োজনে হরতাল অবরোধ দেবো। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’

জোটের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তফসিলের এক বা দুই দিন পর থেকে হরতাল দিতে পারে বামজোট।

এছাড়া, ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের কয়েকজন নেতা জানান, তারা ‘একতরফা নির্বাচন’ হলে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারে। তবে কোনও নেতা এখন স্বনামে মন্তব্য করতে রাজি হননি। যুগপতে যুক্ত একটি দলের প্রধান জানান, ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলকেও সমন্বিত কর্মসূচির মধ্যে আনার চেষ্টা এগিয়ে চলেছে।

আরও সময় নিয়ে ‘অসহযোগ’ কর্মসূচির মত

বিএনপি ও যুগপৎ ধারায় যুক্ত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পতনের দাবিতে চলমান অবরোধে দাবি আদায় না হলে কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনবে বিএনপি ও অন্যরা। তফসিল ঘোষণা হলে অবরোধ, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও বা হরতাল আসতে পারে। এক্ষেত্রে দুটি মত পাওয়া গেছে বিরোধী নেতাদের বক্তব্যে।

বিএনপির একটি পক্ষ চায়, যেভাবে অবরোধ চলছে সেভাবেই চালিয়ে নিতে। সরকারের আচরণ কঠোর হওয়ায় এর থেকে পিছু না হটাই কার্যকর হবে। যদিও অন্য একটি পক্ষ ও যুগপতে যুক্ত দলগুলোর প্রভাবশালী নেতারা মনে করেন, সময় ম্যাচিউর না হলে অবরোধ চালিয়ে যাওয়া বা অসহযোগে যাওয়া হটকারী হতে পারে। এক্ষেত্রে এই পক্ষটি চলতি মাসের শেষে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়ার মত দিয়েছেন।

ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলনের ২৫ নভেম্বর পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম থাকায় ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এ মাসের শেষে যেতে পারে। সব মিলিয়ে অবরোধের পর নতুন কী কর্মসূচি আসবে, তা নিয়ে বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতারা আলোচনা করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আন্দোলন দিন দিন আরও গভীর হবে। অবরোধ হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পক্ষ থেকে যদি কোনও নাড়াচাড়া না থাকে, তাহলে ফেল করে যাবে। সরকার যেখানে শক্ত অবস্থানে গেছে, সেখানে দীর্ঘদিন অবরোধের মতো কর্মসূচি ধরে রাখা একটি চ্যালেঞ্জ।’

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অবরোধের পরে কী আসবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে, সিদ্ধান্ত হয়নি।’

রবিবার সন্ধ্যায় গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘একতরফা তফসিল জনগণ মানে না। মানুষ নানা ফর্মে এর বিরোধিতা করবে। কর্মসূচির আলোচনার মধ্যে বিক্ষোভ, অসহযোগ, অবরোধ, হরতালসহ সব ধরনের কর্মসূচি রয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করছে। তাদের রাজনীতি করছে, তারা কী কর্মসূচি দেবে, সেটা আমরা জানি না। আমাদের কথা বলার নাই এতে।’