‘লোকদেখানো বন্ধ কর’, কাঁদছেন শহিদ সেনা অফিসারের মা, চেকের ছবি তুলতে মজে UP-র মন্ত্রী

দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন ছেলে ক্যাপ্টেন শুভম গুপ্তা। সেই খবর পাওয়ার পর থেকেই কেঁদে চলেছেন মা। কিন্তু সেইসময় সান্ত্বনা দেওয়ার পরিবর্তে শহিদ ছেলের মা’কে চেক দেওয়ার ছবি তুলতে মজে থাকলেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী যোগেন্দ্র উপাধ্যায়। তাঁকে কার্যত ধরে-বেঁধে ‘ফোটো অপারেশন’ চলে মন্ত্রীমশাইয়ের। শুধু তাই নয়, কীভাবে ছবি তুলতে হবে, তাই নিয়েও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী ক্যাপ্টেন শুভমের মা যখন ‘লোকদেখানো কাজ’ করতে বারণ করলেও মন্ত্রীমশাইকে আটকে রাখা যায়নি। যে ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রীর সেই আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছে নেটপাড়া। আক্রমণ শানিয়েছেন বিরোধী নেতারাও। মন্ত্রীকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলেছেন তাঁরা। মন্ত্রীমশাই অবশ্য আপাতত সেই পথে হাঁটেননি।

কী হয়েছে ঘটনাটি? জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরিতে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শহিদ হন উত্তরপ্রদেশের আগ্রার ছেলে শুভম গুপ্তা। শুক্রবার তাঁর দেহ আগ্রায় নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিকভাবে আগ্রার বায়ুসেনার ঘাঁটিতে আনা হয় মরদেহ। শেষবারের মতো পৈতৃক গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় শুভমের দেহ। ঘরের ছেলেকে দেখতে প্রচুর মানুষ আসেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। তারইমধ্যে ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান ওঠে। পরে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। চোখের জলে বিদায় জানানো হয় ক্যাপ্টেন শুভমকে।

তবে সেই চোখের জলের তেমন একটা পরোয়া করেননি উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী যোগেন্দ্র। যিনি আবার খাতায়কলমে বিজেপি-শাসিত রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। ক্যাপ্টেন শুভমের দেহ আগ্রায় পৌঁছানোর আগেই তিনি শহিদ সেনা অফিসারের বাড়িতে পৌঁছে যান। ছেলেকে হারিয়ে সেইসময় কেঁদে যাচ্ছিলেন তাঁর মা। বলে যাচ্ছিলেন যে ‘আমার বেটুকে (ছেলে) চাই।’

আরও পড়ুন: Rajouri Encounter Latest Update: কাশ্মীরে সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াইতে শহিদ পাঁচ সেনাকর্মী, খতম ২ পাক জঙ্গি

কিন্তু মন্ত্রীমশাই সেইসব কিছুর পরোয়া করেননি। বরং তিনি যে চেক তুলে দিচ্ছেন, সেটার ছবি তুলে রাখতে মজে ছিলেন। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক জিএস ধর্মেশের সঙ্গে ৫০ লাখ টাকার চেক (রাজ্য সরকার যে আর্থিক অনুদানের ঘোষণা করেছে) কীভাবে দেওয়া যায় এবং কীভাবে সেই ছবি তুলে রাখা যায়, তাতেই মরিয়া হয়ে ওঠেন উত্তরপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী। কার্যত ধরে-বেঁধে ক্যাপ্টেন শুভমের সঙ্গে মায়ের সঙ্গে ছবি তোলার চেষ্টা করতে থাকেন। আবার তিনি যে ক্যাপ্টেন শুভমের মা’কে চেক দিচ্ছেন, সেটা যাতে ভালোভাবে বোঝা যায়, সেজন্য নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে।

আর মন্ত্রীমশাইয়ের সেই কাজ দেখে বিরক্ত হয়ে ওঠেন ক্যাপ্টেন শুভমের মা। কাঁদতে-কাঁদতেই তিনি বলেন, ‘আমার এইসব কিছু চাই না। আমার বেটুকে (ছেলে) চাই ভাই।’ তাতেও থামেননি মন্ত্রীমশাই। ছবি তোলার ‘মিশনে’ একদম অবিচল থাকেন। তাতে ক্যাপ্টেন শুভমের মা বলে ওঠেন, ‘এসব লোকদেখানো কাজ বন্ধ করুন ভাই।’

আরও পড়ুন: ‘সেনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চায় মোদী সরকার’, তোপ কংগ্রেসের