Rajasthan poll 2023: রাজস্থানের ভোট বৈতরণী পার হতে বিজেপি-কংগ্রেসের ভরসা সেই রাজ পরিবারের সদস্যরাই

রাজস্থানের রাজনীতির সঙ্গে রাজপরিবারের যোগ নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে রাজপরিবারের সদস্যরা দেশের গণতান্ত্রিক পন্থার রাজনীতির সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে গিয়েছেন। এবারও তার অন্যথা হয়নি।

শনিবার রাজস্থান নানা প্রশ্নের উত্তর দেবে। বেছে নেবে তাদের বিধানসভার পছন্দের প্রতিনিধি। যে তালিকায় থাকবেন ছ’জন রাজপরিবারের সদস্য।

রাজপুত সংগঠন প্রতাপ ফাউন্ডেশনের সদস্য মহাবীর সিং সারভাদির মতে, ‘মানুষ এখনও পরিবারের সদস্যদের সম্মানের চোখে দেখেন। এখনও বিশ্বাস করেন যে রাজা রাণিরাই একমাত্র যারা তাঁদের দাবি শোনেন এবং সেই দাবি পূরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আরও এটাই হল রাজপরিবারের সদস্যদের চাবি কাঠি।’

এ বার রাজপরিবারের ছয় সদস্যকে প্রার্থী করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। যার মধ্যে পাঁচজন বিজেপি এবং একজন কংগ্রেস।

বসুন্ধরা রাজে: ধোলপুর রাজপরিবারের সদস্য

রাজ্যের দু’বারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া রাজপরিবার থেকে এসেছেন এবং রাজস্থানের ধোলপুর রাজপরিবারের রাজা হেমন্ত সিংকে বিয়ে করেন। রাজের মা বিজয়া রাজে সিন্ধিয়াও ভারতীয় জন সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন যা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মূল দল ছিল।

বিজেপির বর্তমান জাতীয় সহ-সভাপতি এবং পাঁচবারের সাংসদ রাজে ১৯৯৮ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবেও কাজ করেছিলেন।

গত কয়েক বছর ধরে বসুন্ধরা রাজেকে সরিয়ে নেওয়ার বলা হলেও, তিনি তাঁর ঘাঁটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বিজেপির প্রথম তালিকায় তাঁর নাম ছিল। কংগ্রেস রাজের বিরুদ্ধে নতুন মুখ লাল লাল চৌহানকে প্রার্থী করেছে।

দিয়া কুমারী: জয়পুর রাজপরিবারের রাজকুমারী

গায়ত্রী দেবীর পালক পুত্র সওয়াই ভবানী সিং-এর কন্যা হওয়ার কারণে, দিয়া কুমারী, ১০ বছর আগে রাজস্থানের রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রেখেছিলেন। ২০১৩ সালে সওয়াই মাধোপুর থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন এবং ২০১৯ সালে রাজসামন্দ থেকে সাংসদ হন।

দিয়া কুমারী, যিনি এই নির্বাচনের প্রচারের সময় নিজেকে ‘জয়পুর কি বেটি’ (জয়পুরের কন্যা) বলে প্রচার করেছেন। তবে জয়পুরের বিদ্যাধর নগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে প্রথমবার ভোটযুদ্ধের মুখোমুখি হবেন। তিনি ছিলেন বিজেপির সেই ৭ জন সাংসদের মধ্যে একজন যাঁদের নাম অক্টোবরে দলের প্রথম তালিকায় ওঠে।

কংগ্রেস ওই আসনে ব্যবসায়ী সীতারাম অগ্রবালকে প্রার্থী করেছে। যিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ওই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু হেরে যান।

সুশ্রী সিদ্ধি কুমারী: বিকানের রাজপরিবারের রাজকুমারী

প্রাক্তন সাংসদ মহারাজা কর্নি সিং বাহাদুরের নাতনি। সিদ্ধি কুমারী ২০০৮ সাল থেকে বিকানের পূর্ব আসনে তিনবার বিজেপির বিধায়ক ছিলেন।

২০১৮ সালে, সিদ্ধি কংগ্রেসের কানহাইয়া ঝাঁওয়ারকে মাত্র 3% ভোটে পরাজিত করে আসনটি জেতেন। এই প্রবণতাকে ভাঙার জন্য এবার কংগ্রেস, দলের প্রবীণ নেতা যশপাল গেহলটকে তার বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে।

কল্পনা দেবী: কোটা রাজপরিবারের রানি

মহারাও ইজ্যরাজ সিংহ সিংয়ের স্ত্রী কল্পনা দেবী, কোটার লাদপুরা আসনে বর্তমানে বিজেপি বিধায়ক। ২০১৮ সালে তিনি ওই আসনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৫৩% ভোট পেয়ে কংগ্রেসের গুলানাজ গুড্ডুকে পরাজিত করেন।

তার স্বামী ইজ্যরাজও ২০০৯ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়ে কোটা থেকে সাংসদ হন। কিন্তু ২০১৮ সালে কংগ্রসে তাঁর স্ত্রীকে টিকিট না দেওয়ায় তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।

কংগ্রেস অবশ্য গুলনাজের স্বামী এবং রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সচিব নইমুদ্দিন গুড্ডুকে এবার কল্পনার বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে।

কুনওয়ার বিশ্বরাজ সিং মেওয়ার: উদয়পুর রাজপরিবারের যুবরাজ

সুপরিচিত রাজপুত যোদ্ধা রাজা মহারানা প্রতাপের বংশধ। বিশ্বরাজ সিং মেওয়ার দিল্লিতে দলের সভাপতি চন্দ্র প্রকাশ জোশী এবং রাজসামন্দের সাংসদ দিয়া কুমারীর উপস্থিতিতে গত ১৭ অক্টোবর বিজেপিতে যোগ দেন।

সমগ্র মেওয়ার অঞ্চলে উদয়পুরের রাজপরিবারের যোগসূত্র ব্যবহার করে রাজসামন্দের নাথদ্বারাতে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ভেঙে দেওয়ার আশায় বিজেপি। এই আসনে রাজ্য বিধানসভার স্পিকার এবং পাঁচবারের কংগ্রেস বিধায়ক সি পি জোশীর বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়িয়েছেন।

বিশ্বেন্দ্র সিং: ভরতপুর রাজপরিবারের রাজা

ভরতপুরের শেষ শাসক ব্রিজেন্দ্র সিং-এর ছেলে, বিশ্বেন্দ্র তিনবার বিজেপির সাংসদ। ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে দুইবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন।

ভরতপুর রাজা ১৯৯৮ সালে বিজেপির টিকিটে কুমহের আসন থেকে তার প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের হরি সিংয়ের কাছে মাত্র ৯৪৫ ভোটে হারেন। ২০০৮ সালে তাঁর বিজেপি সহকর্মী দিগম্বর সিংয়ের সঙ্গে বিরোধের কারণে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন।

২০০৮ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিশ্বেন্দ্রকে আবার কংগ্রেস প্রার্থী করে নতুন ডিগ-কুমহের আসনে। যা ডিলিমিটেশনের পরে অস্তিত্বে এসেছিল।

যদিও দিগম্বরের বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনী লড়াইয়ে হেরেছিলেন তিনি। ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের তিনি নির্বাচনে তার দলের জন্য আসন নিশ্চিত করেছিলেন। পরে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট তাঁর মন্ত্রিসভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী করেছিলেন। তাঁকেও এবার প্রার্থী করেছে কংগ্রেস।

কেন রাজনৈতিক দলগুলি বারবার রাজপরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করে? উত্তরে সমাজবিজ্ঞানী রাজীব গুপ্ত বলেন, ‘রাজকীয় সদস্যরা পারিবারিক সত্বা এবং দলগুলির কাঠামোর কারণে জয়ী হচ্ছেন। দলগুলির তাঁদের নির্বাচনে ময়দানে নামায়। কিন্তু তাঁরা কেউ কঠোর পরিশ্রম করেন না। তাঁদের গ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স খুবই হতাশাজনক। রাজা এবং রানিদের জনগণের সঙ্গে খুব কমই যোগসূত্র রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলি কি রাজ পরিবারের সদস্যদের তুষ্ট করে সামন্ততন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে যা আজকের সমাজে মূল্যহীন?’