কাশ্মীরে বাঙালি জওয়ানের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা, গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা শুধু জানাল সেনাবাহিনী

ভূস্বর্গে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বাঙালি জওয়ান। কিন্তু হঠাৎই তাঁর মৃত্যু সংবাদ গ্রামে এসে পৌঁছল। তবে কেমন করে তাঁর মৃত্যু হয়েছে সে খবর বিস্তারিতভাবে আসেনি। শুধু জানানো হয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে কাশ্মীরে কর্মরত এক বাঙালি সিআরপি জওয়ানের। তাহলে কি কোনও অপারেশনে গিয়েছিলেন বাঙালি জওয়ান?‌ উঠছে প্রশ্ন। যদি তা না গিয়ে থাকেন তাহলে গুলিবিদ্ধ হলেন কী করে?‌ পরিবার এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়। বীরভূম জেলার কীর্ণাহারের আলিগ্রামের বাসিন্দা ওই বাঙালি জওয়ানের নাম বিশ্বজিৎ অধিকারী (৩৬)। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর খবরটুকুই শুধু তাঁদের জানানো হয়েছে। কেমন করে এই ঘটনা ঘটল?‌ সেটা তাঁরা এখনও জানেন না।

পুলিশ সূত্রে খবর, ২০০৬ সালে সিআরপিএফের ১১০ নম্বর ব্যাটেলিয়নে যোগ দেন বিশ্বজিৎ অধিকারী। এখন তিনি শ্রীনগরের পুলওয়ামায় নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় নানা দায়িত্ব পালন করে ছিলেন। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার রাতে বাড়িতে খবর আসে, বিশ্বজিৎ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এই খবর আসতেই মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়েছে অধিকারী পরিবারে। বিশ্বজিতের এক সম্পর্কিত দাদা, অভিজিৎ অধিকারী কাশ্মীরে সিআরপিএফ জওয়ান হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘ইউনিট থেকে ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরটুকুই দেওয়া হয়েছে। কারণ আমরা এখনও জানতে পারিনি।’ সুতরাং একটা রহস্য তৈরি হয়েছে বাঙালি জওয়ানের মৃত্যু নিয়ে।

এদিকে এই রহস্য জিইয়ে রাখার কারণ কেউ বুঝতে পারছেন না। কারণ সেনাবাহিনীর নিয়ম হল, কোনও জওয়ান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলে তাঁর পরিবারে বিস্তারিত তথ্য পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে শুধু গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু জানিয়ে আর কিছু জানানো হয়নি। সেক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবার সূত্রে খবর, দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় বিশ্বজিৎ অধিকারীর বিয়ে হয় ১২ বছর আগে। আর ১০ বছর ধরে স্ত্রী নবনীতা ও ছেলে আকাশকে নিয়ে বিশ্বজিৎ পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় বাড়ি করে থাকতেন। ছুটি পেয়ে বাংলায় ফিরলে কাটোয়ায় আসতেন বিশ্বজিৎ। আর তখনই বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে কীর্ণাহারে গ্রামের বাড়িতে চলে আসতেন। এই স্মৃতিই এখন আঁকড়ে ধরছেন বিশ্বজিতের বাবা–মা।

আরও পড়ুন:‌ শেখ শাহজাহান কোথায়?‌ ‘‌মা গঙ্গার কাছেই তার উত্তর আছে’‌, রাজ্যপালের মন্তব্য ধোঁয়াশা

অন্যদিকে বিশ্বজিতের আর্থিক সাহায্যেই সংসার চলত। ছেলে ছোট। গোটা পরিবার কেমন করে চলবে?‌ এই প্রশ্নে দিশেহারা সবাই। তার মধ্যে বিশ্বজিতের বাবা গৌরাঙ্গ অধিকারী দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। এমনকী দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। তাঁর চিকিৎসার খরচও আছে। ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। মা কৃষ্ণা অধিকারী বাকরুদ্ধ। শুধু দু’‌চোখ বেয়ে জল পড়ে যাচ্ছে। বিশ্বজিতের জেঠু রঞ্জিৎ অধিকারী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এবার কালীপুজোয় বাড়ি এসেছিল। ছুটি পেলে আবার আসব বলে কাশ্মীর গিয়েছিল। সেটা আর ফিরল না।’ নানুরের বিডিও সন্দীপ সিংহরায় বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি। খোঁজ নিচ্ছি।’